বিক্ষোভ: বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার প্রতিবাদে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ। উলুবেড়িয়ার তাঁতিবেড়িয়ায়। মঙ্গলবার রাতে। ছবি: সুব্রত জানা।
পেনাল্টিতে গোল ‘মিস’ করেছেন লিওনেল মেসি। আইসল্যান্ডের সঙ্গেও এঁটে উঠতে পারেনি আর্জেন্টিনা। আর সে দৃশ্য বেমালুম ‘মিস’ করে গিয়েছেন নীল-সাদা সমর্থক উত্তরপাড়ার বিশ্বনাথ মণ্ডল।
সৌজন্যে লোডশেডিং।
একই রকম রাগ ব্রাজিল সমর্থকদেরও। কারণ রবিবারও লোডশেডিংয়ের জেরে রাতের খেলায় ব্রাজিলকে দেখা যায়নি হুগলির অনেক জায়গায়। আর তারই মধ্যে দক্ষিণবঙ্গে শুরু হয়েছিল তাপপ্রবাহ। বুধবার দুপুরে বৃষ্টি নামার আগে পর্যন্ত তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করেছে হাওড়া-হুগলিও।
লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ উলুবেড়িয়া তাঁতিবেড়িয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই দিন দফায় দফায় লোডশেডিং হয়েছে ওই এলাকায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েকদিনের তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিসে ফোন করেও লাভ হয়নি। পুলিশ অবরোধ তুলতে গেলে আরও ক্ষোভ ছড়ায়। অবশেষে প্রায় ৪৫ মিনিট পর এলাকায় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা এলে অবরোধ ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বনাথ ভুঁইয়া বলেন, ‘‘বিশ্বকাপ তো মাথায় উঠেছে! এই গরমে বাচ্চাদের নিয়ে থাকি কী করে বলুন তো! অনেকে বাড়িতেই অসুস্থ, বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। একটা পাখা না চললে বাঁচব কী করে!’’ শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় বহু কুটির শিল্প রয়েছে। সেখানেও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে কাজের ক্ষতি হচ্ছে। উলুবেড়িয়া বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘একটু সমস্যা হয়েছিল। খবর পেয়েই কর্মীরা গিয়েছেন। দ্রুত মেরামতি হয়ে গিয়েছে।’’
তবে পরিস্থিতি এতটা সহজ নয়। বলছেন হাও়ড়া-হুগলি দু’জেলার মানুষই। মাস খানেক আগে কালবৈশাখী হয়েছিল দু’তিনটি। এলাকার মানুষের অভিযোগ, সেই থেকে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের সমস্যা। তখন সিইএসসি বা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা জানিয়েছিল, ঝড়ে বিদ্যুৎবাহী তারে গাছ পড়ে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সে সমস্যা এখনও বজায় রয়েছে। লোডশেডিং হচ্ছে নিয়ম করে— বিশেষত গ্রামের দিকে। হুগলির গ্রামীণ দু’টি পুরসভা তারকেশ্বর ও আরামবাগেও লোডশেডিং এর কমতি নেই এখন। ডানকুনি শিল্পাঞ্চলেও একই অবস্থা।
সঙ্গে রয়েছে লো-ভোল্টেজের সমস্যা। পাখা এমন ঘুরছে গায়ে হাওয়া লাগছে না। মিটমিটে আলোয় পড়াশোনা করতে হ্যারিকেনও জ্বালতেই হচ্ছে। গ্রামের দিকে বাড়ি এবং স্কুলের পাম্পে জল তোলা যাচ্ছে না— বিপর্যস্ত আরামবাগ শহর-সহ সমগ্র মহকুমা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সপ্তাহ দেড়েক ধরে শুরু হয়েছে লোডশেডিং-র প্রকোপ। দিনে অন্তত চারবার করে লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতিবার ন্যূনতম ২০ মিনিট থেকে আধ ঘন্টা বিদ্যু থাকছে না। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে গ্রাহকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই আছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন রাজ্যে না কি বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার থেকে বেশি। তা হলে এত লোডশেডিং কেন? রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক পদস্থ কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘রাজ্যে সে ভাবে বিদ্যুত ঘাটতি নেই, সেটা বাস্তব। তবে বিদ্যুতের চাহিদা গরমে কিছুটা বাড়ে। সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ পরিবহণের ক্ষেত্রে। অনেক সময় ট্রান্সফর্মারের উপর বাড়তি চাপ পড়ায় খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তখন বিদ্যুৎ সংবহনে কিছুটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।’’
লোডশেডিং এবং লো-ভোল্টেজের অভিযোগ নিয়ে আরামবাগ স্টেশন ম্যানেজার অরিজিৎ মণ্ডল বলেন, “লোডশেডিং হলেও ২-৫ মিনিটের বেশি হয়নি। তবে অতিরিক্ত চাপের জন্য ভোল্টেজ নিয়ে যে বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে, তার মোকাবিলা করতে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার বসানোর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু ট্রান্সফর্মার বসানোর জায়গা পাওয়া নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।”
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আরামবাগ ডিভিশনাল ম্যানেজার জীবনলাল মল্লিক বলেন, “আরামবাগ শহরে বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থাপনার উন্নীতকরণ এবং উপভোক্তাদের কাছে ঠিক ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সাব-স্টেশনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। খুব শীঘ্র তা চালু হবে। তা হলে আর সমস্যা থাকবে না।”