অবরুদ্ধ: ভদ্রেশ্বরের শ্যামপুর চটকলের সামনে অবরোধকারীরা। ছবি: তাপস ঘোষ
কোথাও কাজ হল। কোথাও হল না।
বুধবার ভারত বন্ধে হুগলি শিল্পাঞ্চলে চোখে পড়ল এমন ছবিই।
এক সময় এই জেলায় গঙ্গার পাড় জুড়ে কল-কারখানা রমরমিয়ে চলত। সেই সুদিন আর নেই। হিন্দমোটর থেকে জেকে স্টিল, বঙ্গলক্ষ্মী কটনমিল থেকে ডানলপের মতো কারখানায় তালা ঝুলছে। দেড় বছর ধরে বন্ধ চন্দননগরের গোন্দলপাড়া, শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল। তালিকায় নতুন সংযোজন ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক চটকল।
এ দিন গঙ্গাপাড়ের বিভিন্ন চটকলে শ্রমিকদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। ভদ্রেশ্বরের নর্থ শ্যামনগর, অ্যাঙ্গাস, ডালহৌসি চটকলের সামনে সকাল থেকেই বন্ধ সমর্থনকারী বাম এবং কংগ্রেস সমর্থকেরা ঝান্ডা হাতে জড়ো হন। তাঁদের এড়িয়ে অনেক শ্রমিকই মিলে ঢোকেননি। পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় উৎপাদন চালানো যায়নি।
ডালহৌসি চটকলের শ্রমিক সুরেশ সাউ বলেন, ‘‘জুটমিলগুলোতে শ্রমিকরা শোষিত হচ্ছেন। কখন কোন মিল বন্ধ হবে কেউ জানেন না। এই ধর্মঘটে মালিকপক্ষ কিছুটা শুধরে গেলে ভাল হয়।’’ নর্থব্রুক চটকলের তাঁত বিভাগের শ্রমিক অশোক যাদব বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে আমাদের চটকল বন্ধ। আমি কোনও দল না করলেও আন্দোলনকে সমর্থন করছি।’’ বাঁশবেড়িয়া চটকলে অর্ধেকের উপরে শ্রমিক এলেও কাজ হয়নি। শ্রমিকদের একাংশের দাবি, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের কর্মীরা এসে কাজ বন্ধ করে দেন। নগেন্দ্র চৌধুরী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘গত দু’দিন ধরেই সিপিএমের সমর্থকেরা মিলের গেটের সামনে শ্রমিকদের কাজ না করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন। দু’দলের লোকেরাই কাজ বন্ধ করে দেন।’’
গোন্দলপাড়ার শ্রমিক মহল্লা বন্ধে সাড়া দিয়েছে বলে দাবি সেখানকার ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন কাউন্সিলর রাজেশ জয়সোয়ারার। তিনি বলেন, ‘‘বাজার, ফেরিঘাটে শ্রমিক মহল্লার ছেলেরা গিয়েই বন্ধে সবাইকে সামিল হওয়ার অনুরোধ জানান। জিটি রোডে অবস্থান-বিক্ষোভ করেন। শ্রমিক মহল্লা বুঝে গিয়েছে, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের জন্য কিচ্ছু করবে না।’’ শ্রমিকদের অভিযোগ, কখনও বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, কখনও তৃণমূল বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেও কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। অশোক চৌধুরী নামে এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘আমরা ভুখা। বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ। আমাদের কাছে রোজই বন্ধ! যে ভাবে হোক, মিল খুলে যাক। আর কিছু চাই না।’’
ডানকুনি শিল্পাঞ্চলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং দিল্লি রোডের ধারে কয়েকশো কারখানা রয়েছে। একশো শতাংশ হাজিরা না থাকলেও অবশ্য এখানে অনেক কারখানাতেই কাজ হয়েছে। ত্রিবেণি, আদিসপ্তগ্রামেও বিভিন্ন কল-কারখানায় কাজ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বাম এবং কংগ্রেস নেতাদের দাবি, সর্বত্রই শ্রমিকরা বন্ধে সামিল হয়েছেন। এসইউসি প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন এআউইউটিইউসি-র রাজ্য সহ-সভাপতি দিলীপ ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতেই দলমত নির্বিশেষে সব শ্রমিক ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন।’’ জেলা সিটু নেতা তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলে বন্ধ সর্বাত্মক। ১০টি চটকলে কাজ হয়নি। ডানকুনি থেকে মগরা পর্যন্ত বিভিন্ন কল-কারখানা বন্ধ ছিল।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘কিছু জায়গায় জোর করে কারখানা চালানো হয়েছে। এটা বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের মৈত্রী ছাড়া আর কিছু নয়।’’
জেলা আইএনটিটিইউসি সভাপতি বিদ্যুৎ রাউতের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘শ্রমিকরা ধর্মঘট সমর্থন করেননি। দু’একটি জায়গা ছাড়া সর্বত্রই কল-কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে। তবে এটা ভাবার কারণ নেই যে, যাঁরা ধর্মঘটে সামিল হননি তাঁরা এনআরসি, সিএএ-র পক্ষে। দলমত নির্বিশেষে সব শ্রমিক কেন্দ্রের এই সর্বনাশা পদক্ষেপের বিরুদ্ধে।’’