প্রতীকী ছবি।
মুম্বইতে গয়নার কারিগর ছিলেন সিঙ্গুর ব্লকের বিঘাটি পঞ্চায়েতের ধোবাপুকুরের অরূপ মান্না। করোনার ধাক্কায় বাড়ি ফিরে এসেছেন। এখন ১০০ দিনের কাজ করছেন।
ওই পঞ্চায়েতেই পাটুলের সুনীল দাস, পান্ডুয়া ব্লকের সিমলাগড়-ভিটাসিন পঞ্চায়েতের শ্যামল রুইদাস, বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের পাটমহলের শেখ খোকন, শেখ সামসুলউদ্দিনরাও ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতেন। তাঁরাও নিজের গ্রামে ১০০ দিনের কাজের শ্রমিক বনে গিয়েছেন।
লকডাউনে পেশা হারিয়ে অরূপ, সুনীলদের মতো হুগলি জেলার বহু মানুষের কাছেই এখন ১০০ দিনের কাজ রুজি-রুটির ভরসা। কেউ কেউ কল-কারখানার কাজ খুঁইয়ে পেট চালাতে সরকারি এই প্রকল্পকে আঁকড়ে ধরেছেন। ফলে, এই প্রকল্পে কাজের পরিধি বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষের গোড়া অর্থাৎ গত এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত কাজের নিরিখে রাজ্যের ২৩টি জেলায় সার্বিক ভাবে শীর্ষে রয়েছে হুগলি। রাজ্য প্রশাসনের পরিসংখ্যান সে কথাই বলছে।
হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘গত জানুয়ারি মাস থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে আমরা পরিকল্পনা এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করেছি। সেই ধারাই চলছে।’’ তিনি জানান, এলাকার অবস্থান, বিস্তার, জনবসতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, কৃষি-জলবায়ু প্রভৃতি মাপকাঠি অনুযায়ী প্রত্যেক ব্লকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ভাল কাজ করলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। এই ভাবে ব্লকগুলির মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। তার সঙ্গে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই প্রকল্পে কাজের বহর আরও বেড়েছে। তালিকায় হুগলির পরে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। তিনে পশ্চিম মেদিনীপুর। তার পরে বাঁকুড়া এবং পূর্ব বর্ধমান। হুগলিতে ১৮টি ব্লকে মোট ২০৭টি পঞ্চায়েত রয়েছে। গত এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত এখানে প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি পরিবার জবকার্ডের আওতায় রয়েছেন। এই সাড়ে পাঁচ মাসে ৪৫৮৬৫.৩৯ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে। বৃহস্পতিবার ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ কাজ করেছেন। মোট শ্রমিকের সংখ্যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। হিসেব অনুযায়ী তা ১২৮.৫৫%।
এক নজরে ১০০
• জেলায়১৮টি ব্লকে ২০৭টি পঞ্চায়েত
• কর্মদিবস ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬৭১
• কাজের আওতায় ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭১১ পরিবার
• খরচ হয়েছে ৪৫৮৬৫.৩৯ লক্ষ টাকা
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিকের বক্তব্য, কয়েক বছর আগে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে ধনেখালি-সহ দু’-একটি ব্লকের উপরে নির্ভর করতে হত। এখন তা নির্দিষ্ট ভাবে প্রত্যেক ব্লকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরামবাগ, গোঘাট ১, ২, চণ্ডীতলা ১, পোলবা-দাদপুর, পান্ডুয়া, জাঙ্গিপাড়া, সিঙ্গুর-সহ বিভিন্ন ব্লকে ভাল কাজ হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, ‘‘লকডাউনে যাঁরা অন্য রাজ্য থেকে ফিরে এসেছেন, যাঁরা কলকাতা বা অন্যত্র কল-কারখানার কাজ খুঁইয়েছেন, তাঁরা কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’’
বিভিন্ন পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিরা জানান, জবকার্ড থাকা সত্বেও অনেকে এই কাজ করতেন না। এখন করছেন। জেলা পরিষদের কৃষি-সেচ কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, কাজের বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল হয়েছে। সেই কারণেও কাজ বেড়েছে। আগে ব্যক্তিগত পুকুর কাটা কেন্দ্রের নির্দেশিকায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন সেই নিষেধাজ্ঞা নেই। লকডাউনে এই কাজে বনসৃজনও আলাদা মাত্রা পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের সবুজমালা প্রকল্পে গাছ লাগাচ্ছেন ১০০ দিনের কাজের শ্রমিকেরা। চণ্ডীতলা ১ ব্লকে এই কাজে নার্সারি তৈরি হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজের টাকা পাচ্ছেন শ্রমিকরা।
মনোজ বলেন, ‘‘আগে বছরের শুরুতে নেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে হত। তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজের অদলবদল করার সুযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রামবাসীরা উপকৃত হচ্ছেন।’’