সচেতনতা প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে হুগলি সংশোধনাগারে। ছবি: তাপস ঘোষ
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হুগলি জেলা সংশোধনাগারের বন্দিদের বিকেলবেলা সেলের বাইরে আর না-ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কর্তৃপক্ষ।
ইতিমধ্যে ওই জেলে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত এক বিচারাধীন বন্দির করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ মিলেছে। তার পরে ছয় বন্দি এবং এক কারারক্ষীরও করোনা ধরা পড়েছে। তাই এখন অতিরিক্ত সতর্ক থাকার সময় এসেছে বলে জানিয়েছেন ওই সংশোধনাগারের এক কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘সতর্কতার অঙ্গ হিসেবেই জেলের ভিতরে বন্দিদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’’
সংশোধনাগার সূত্রের খবর, বিধি অনুয়ায়ী প্রতিদিন বিকেলে বন্দিদের কিছুটা সময় জেলের ভিতরেই ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সময় তাঁরা নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করেন। অনেকেই জেলের ক্যান্টিন থেকে চা বা অন্য খাবার খান। বিকেলেরই একটা নির্দিষ্ট সময়ে আবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ দেওয়া হয় বন্দিদের।
বন্দিদের এই গতিবিধি এবং মেলামেশাতেই এখন নিয়ন্ত্রণ আনতে চাইছেন কারাকর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, সংক্রমণ এখনই ঠেকানো না গেলে তা বহু বন্দির মধ্যে ছড়াতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে। বর্তমানে ওই জেলে বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি। থাকার কথা ৪০০ জনের। আছেন প্রায় ৭০০ জন। অর্থাৎ, প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি।
জেলে করোনা হানা দেওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই পর্যায়ক্রমে করোনা পরীক্ষার জন্য জেলবন্দিদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর সঙ্গে তাঁদের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আপাতত কথা বলা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা, তা-ও ভাবা হচ্ছে বলে এক জেলকর্তা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কে কোথা থেকে আসছেন, তাঁর সংক্রমণ রয়েছে কিনা, তিনি করোনা-বিধি মানছেন কিনা, এমন নানা প্রশ্ন এবং সংশয় উঠে আসছে এই আবহে।’’
আট জন সংক্রমিত হওয়ায় আরও সংক্রমণের আশঙ্কা শুধু জেলেই নয়, বাইরেও ছড়িয়েছে। ওই জেল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা জানান, নানা কাজে কারাকর্মী এবং কারারক্ষীরা বাইরে আসেন। তা থেকেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ নিয়ে সচেতনতার জন্য সোমবার জেল এবং লাগোয়া এলাকায় লিফলেট িবলি করতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা।
মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা মনে করছেন, জেলে যে ভাবে সংক্রমণ হচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিচার বিভাগের এখন জেলবন্দিদের প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার কথা চিন্তা করা উচিত। তাতে বন্দিরা সংক্রমণ থেকে অন্তত অনেকটা নিরাপদে থাকবেন।
একটি মানবাধিকার সংগঠনের জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি কুমার বলেন, ‘‘আমরা জেলবন্দিদের আপাতত প্যারোলে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষকে দু’বার চিঠি দিয়েছি। ফের এই বিষয়ে কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে সংগঠনে আলোচনা করব। এখন মানবিক দিক দিয়ে সমস্ত পরিস্থিতি দেখা উচিত।’’