হুগলি

জেলা পরিষদে সংবর্ধনা, গরহাজির অর্ধেক সদস্যই

হুগলি জেলা পরিষদে দলের সদস্যদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে কম শব্দ খরচ করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অনৈক্যের ছবিটা যে কোনও কিছুতেই বদলায়নি, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল শনিবার। এ দিন জেলার বিধায়কদের সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল জেলা পরিষদের তরফে। একই সঙ্গে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, আলিম, ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধিত করার আয়োজনও করা হয়।

Advertisement

জস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৬ ০৭:০৪
Share:

হুগলি জেলা পরিষদে দলের সদস্যদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে কম শব্দ খরচ করেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অনৈক্যের ছবিটা যে কোনও কিছুতেই বদলায়নি, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে গেল শনিবার। এ দিন জেলার বিধায়কদের সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল জেলা পরিষদের তরফে। একই সঙ্গে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, আলিম, ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধিত করার আয়োজনও করা হয়। কিন্তু শাসক দলের সিংহভাগ সদস্যই ওই অনুষ্ঠান এড়িয়ে গেলেন।

Advertisement

শনিবার হওয়া সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন বিধানসভা খোলা থাকায় বলতে গে‌লে বিধায়কদের কেউই হাজির হতে পারেননি। শুধুমাত্র উত্তরপাড়ার বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল অল্প কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েই বিধানসভায় চলে যান। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃতী ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবক এবং স্কুলের শিক্ষকেরা এসেছিলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সভাধিপতি মেহবুব রহমান এবং কয়েক জন কর্মাধ্যক্ষ। মাঝপথে ঢোকেন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল। ছাত্রছাত্রীদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সাঁটা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। অতিথিদের ব্যাজেও ছিল মমতার মুখ।

জেলা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যই অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে পা মাড়াননি। শ্রীরামপুর, চন্দননগর এবং আরামবাগ মহকুমার অনেক সদস্যই ছিলেন অনুপস্থিতের তালিকায়। অনুপস্থিত সদস্যদের অনেকেরই ক্ষোভ, দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সভাধিপতি কার্যত একার হাতে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেন। এ দিনের অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সদস্যদের সঙ্গে তিনি কোনও আলোচনা করেননি। অনুষ্ঠানের রূপরেখা চূড়ান্ত করে ফেলার পরে তাঁদের জানানো হয়। এই কারণেই তাঁরা অনুষ্ঠানে যাননি। সদস্যদের ক্ষোভ, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কোনও সিদ্ধান্ত এই কমিটিতে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু কয়েক মাস ধরে মনিটরিং কমিটির বৈঠকই হচ্ছে না।

Advertisement

শুধু এ দিনের অনুষ্ঠানই নয়, গোঘাটের বিধায়ক মানস মজুমদারের পরিবর্তে সেচ ও কৃষি এবং সমবায় কর্মাধ্যক্ষ পদে কাকে বসানো হবে, তা নিয়েও সদস্যদের একাংশ ক্ষুব্ধ হন। তৃণমূল শিবিরের খবর, রাজ্যের এক মন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী বলাগড় ব্লকের এক মহিলা সদস্যকে মানসবাবুর ছেড়ে দেওয়া পদে বসানোর চেষ্টা শুরু হয়। বিষয়টি সদস্যদের অনেকই মেনে নিতে পারেননি। তাঁদের বক্তব্য, সবাই মিলে আলোচনা করে তবেই যোগ্যতম সদস্যকে ওই পদে বসানো উচিৎ। এই পদে বসার দাবিদার হিসেবে হরিপাল থেকে নির্বাচিত এক বর্ষীয়ান সদস্যের নাম উঠে আসে। অন্য এক পক্ষের আবার বক্তব্য, মানসবাবু যেহেতু আরামবাগ থেকে নির্বাচিত হয়ে কর্মাধ্যক্ষ হয়েছিলেন, তাই তাঁর ছেড়ে দেওয়া জায়গায় ওই মহকুমারই কোনও সদস্যকে বসানো হোক। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট জলঘোলা হয়। তার মধ্যে এ দিনের অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে অভিযোগ তুলে অনেকে জেলা পরিষদে না যাওয়ায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে।

এক দিকে দলের অন্দরে ক্ষোভ, অন্য দিক বিরোধীদের সমালোচনার মুখেও পড়তে হচ্ছে সভাধিপতি মেহবুব রহমানকে। চাঁপদানির কংগ্রেস বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান এবং পান্ডুয়ার সিপিএম বিধায়ক আমজাদ হোসেনকে সংবর্ধনা সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। মান্নান বলেন, ‘‘আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ওঁদের থেকে সেই ভদ্রতা আশাও করি না। সরকারি অনুষ্ঠানকেও ওঁরা দলের অনুষ্ঠান করে ফে‌লছে।’’ আর আমজাদের বক্তব্য, ‘‘অতিথিদের ব্যাজে বা ছাত্রছাত্রীদের স্মারকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখের ছবি থেকেই পরিস্কার, ওঁরা সরকারি খরচে দলের অনুষ্ঠান করতে চেয়েছে। ওঁদের সবটাই দলতন্ত্র।’’

দলীয় সদস্য ও বিরোধী বিধায়দের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সভাধিপতি মেহবুব রহমান দাবি করেন, ‘‘সব দলের বিধায়ককেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা ঈর্ষাকাতর হয়ে এটা করছেন।’’ আর দলের সদস্যদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কে কী বলছেন জানি না, তবে সব ‌নিয়ম মেনেই সংশ্লিষ্ট জায়গায় আলোচনা করে অনুষ্ঠান ঠিক করা হয়েছে। দলের ব্যাপার বাইরে বলব না। তবে দলের জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই কর্মাধ্যক্ষ বাছাই করা হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement