মজা: সরস্বতী নদী এখন যে অবস্থায়। নিজস্ব চিত্র
একেই বলে টাকা জলে যাওয়া।
২০০৮ সালে সরস্বতী নদী সংস্কারের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে বরাদ্দ করে ৩২ কোটি টাকা। ওই বছরের ২২মে সাঁকরাইলে গঙ্গায় সরস্বতীর মিলনস্থল থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর কয়েক দিনের মধ্যে নেমে যায় বর্ষা। ফলে ‘গঙ্গাপ্রাপ্তি’ ঘটে সংস্কার কাজের। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় ৯ বছর। সরস্বতী সংস্কারে আর হাত পড়েনি। ফলে এই নদী ফের আবর্জনায় ভরে ফিরে গিয়েছে তার আগের চেহারায়।
সরস্বতী নদীর উৎপত্তি গঙ্গা থেকে। মিলেছেও গঙ্গাতেই। হুগলির ত্রিবেণির কাছে গঙ্গা থেকে বেরিয়ে হাওড়ার সাঁকরাইলে ফের মিশে গিয়েছে গঙ্গায়। দুই জেলা মিলিয়ে মোট দৈর্ঘ্য ৭৭ কিলোমিটার। একদা নদীতে জোয়ার-ভাটা খেললেও এখন মজে গিয়ে এবং দখলদারি দাপটে নালার আকার নিয়েছে। অথচ একসময়ে এই নদী হাওড়া এবং হুগলির জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত।
হুগলিতে সপ্তগ্রাম এবং হাওড়ার বেতড়ে দুটি বন্দর গড়ে উঠেছিল সরস্বতীর ধারে। ইতিহাস তার সাক্ষী। তবে ধীরে ধীরে এই নদী পলি জমে মজে যেতে থাকে। হারাতে থাকে বাণিজ্যিক গুরুত্ব। সেচ দফতরের ভাষায় এখন এটি একটি নিকাশি খাল। অর্থাৎ চাষাবাদের থেকেও এই নদীর গুরুত্ব বেশি শহর হাওড়ার জল নিকাশির ক্ষেত্রে।
বর্তমানে নদীর পাড় বেদখল হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে বসতবাড়ি, দোকানঘর, খাটাল। ডোমজুড় এবং সাঁকরাইলের শহরাঞ্চলের উপর দিয়ে এই নদী প্রবাহিত হওয়ায় ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের ফেলা বর্জ্য নাগাড়ে পড়ছে নদীতে। ডোমজুড়ের দক্ষিণ ঝাঁপড়দহে এসে দেখা গেল দোকানের বর্জ্য পড়ে ভর্তি হয়েছে নদী। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। অথচ দেখার কেউ নেই। ১৯৯৮ সাল থেকে বার বার সরস্বতী সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। দাবি উঠেছে জবরদখল উচ্ছেদের। মূলত সেই আন্দোলনের ফলে ২০০১ সালে তৎকালীন রাজ্য সরকার সরস্বতী সংস্কারের পরিকল্পনা করে। তবে কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। ওই বছর সাঁকরাইল থেকে সিঙ্কুরের নসিবপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার অংশে সংস্কারের পরিকল্পনা করা হয়। এর জন্য বরাদ্দ হয় ৩২ কোটি টাকা। সাঁকরাইলের দিক থেকে সংস্কারের কাজও শুরু হয়।
প্রথম পর্যায়ে ছয় কিলোমিটার খাল সংস্কারের কাজে নামে সেচ দফতর। আন্দুলে নদীর ধার থেকে কিছু জবরদখলকারীকে হটিয়ে দেওয়া হয়। তুলে দেওয়া হয় খাটাল। নদীর বুক থেকে পলি তোলা হয়। বাঁধানো হয় পাড়। ইতিমধ্যেই বর্ষা নামে। সেই কারণে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ না করেই রণে ভঙ্গ দেয় সেচ দফতর। ব্যস ওই পর্যন্তই। তার পর আর সংস্কারের ছোঁয়া পায়নি নদী। ফলে নদী পরিণত হয়েছে পানা এবং আবর্জনায় ভর্তি পূতিগন্ধময় নালায়। দূষণে অতিষ্ঠ হয়ে নদীর দু’দিকের বাসিন্দারা ফের দাবি তুলেছেন সরস্বতী সংস্কারের। ‘সরস্বতী বাঁচাও কমিটি’ কমিটির ছাতার তলায় ফের শুরু হয়েছে আন্দোলন।
সরস্বতী বাঁচাও কমিটির পক্ষে বাপী ঠাকুর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক সময় সরস্বতীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাসে হাওড়া জেলার ইতিহাসের গন্ধ পাওয়া যেত। এখন দুর্গন্ধের চোটে নদীর ধারে যাওয়া যায় না। আমরা চাই সংস্কার করে নদীকে ফের আগের চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক।’’