প্রস্তুতি: শ্রমিক মেলার জন্য ম্যারাপ বাঁধা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
বন্ধ গোন্দলপাড়া চটকলের শ্রমিকরা দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এই অবস্থায় চন্দননগর শহরে শ্রমিক মেলার আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ওই বন্ধ চটকলের আত্মঘাতী শ্রমিক শ্যামা দাসের পরিবারের লোকেরা। অবিলম্বে মিল খোলার দাবিও জানালেন তাঁরা। ওই শ্রমিকের অপমৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে আগামী শনিবার জেলার শিল্পাঞ্চলে কালা দিবসের ডাক দিয়েছে সিপিএম। ওই দিনই চন্দননগরে শুরু হচ্ছে শ্রমিক মেলা।
বছর পঁচিশের শ্যামা গোন্দলপাড়া চটকলের তাঁত বিভাগের অস্থায়ী শ্রমিক ছিলেন। বছর দেড়েক আগে মিল বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে ছোটখাট কাজ করে তিনি সংসার চালাচ্ছিলেন। ছ’মাস আগে বিয়ে করেন। বাড়ির লোকজনের দাবি, যৎসামান্য রোজগারে সংসার চালাতে পারছিলেন না তিনি। সেই নিয়ে তিনি হতাশার কারণেই রবিবার শ্রমিক কোয়ার্টারে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। শ্রমিকদের অভিযোগ, অভাবের তাড়নায় গত এক বছরে এই নিয়ে পাঁচ শ্রমিক আত্মঘাতী হলেন।
মঙ্গলবার সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল গোন্দলপাড়ার মালাপাড়ায় মৃত ওই শ্রমিকের বাড়িতে যায়। ওই দলে ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তীর্থঙ্কর রায়, চন্দননগরের প্রাক্তন বিধায়ক শিবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, সিটুর জেলা সভাপতি মলয় সরকার। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের স্থানীয় জোনাল কমিটির সম্পাদক হীরালাল সিংহ-সহ অন্যরা। শ্যামার পরিবারের অবস্থা নিয়ে তাঁরা খোঁজখবর নেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। কথাবার্তার মাঝে কেউ বলেন, দিন কয়েক পরে আগামী শনিবার থেকে তিন দিন ধরে চন্দননগরের মেরির মাঠে শ্রমিক মেলা হবে। তা শুনে মুনিয়া, নন্দিনীরা বলে ওঠেন, শ্রমিকদের পেটে যেখানে ভাত জুটছে না, পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হচ্ছে, সেখানে তাঁদের কাছে শ্রমিক মেলার কোনও মূল্য নেই।
পরে সংবাদমাধ্যমের কাছেও মুনিয়াদেবী বলেন, ‘‘শ্রমিক আবাসনটা যেন শ্মশান হয়ে যাচ্ছে। এত মানুষ দুর্দশায়, সরকার কি চোখে দেখতে পাচ্ছে না! মেলাখেলার আনন্দ আর আমাদের ছোঁয় না।’’ ওই চটকলের শ্রমিক রাধাকৃষ্ণ পাণ্ডে বলেন, ‘‘আমরা ভুখা দিন কাটাচ্ছি। অথচ কয়েক কিলোমিটার দূরে শ্রমিকদের ভালর জন্যই নাকি মেলা হচ্ছে! হাস্যকর।’’ শ্রমিকদের অভিযোগ, কেন্দ্র এবং রাজ্য— শ্রমিকদের সমস্যা দূর করার প্রশ্নে দুই সরকারই নিশ্চুপ।
সিপিএম নেতা তীর্থঙ্করবাবু বলেন, ‘‘জেলা জুড়েই শিল্প ধুঁকছে। একের পর এক কারখানা বন্ধ। যেখানে শ্রমিকদের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই, সেখানে ঝা-চকচকে প্যান্ডেল করে মেলার আয়োজন শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। এর প্রতিবাদেই শনিবার কালা দিবস পালন করা হবে। সমস্ত চটকলে শ্রমিকরা বুকে কালো ব্যাজ পরবেন। ওই মেলা শ্রমিকরা বয়কট করবেন। একটাই দাবি, মিল খুলে শ্রমিকদের পেটে ভাত দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হোক।’’
চন্দননগরের উপ শ্রম কমিশনার কিংশুক সরকার বলেন, ‘‘শ্রম দফতরের তরফে প্রতি বছরেই শ্রমিক মেলা হয়। শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয় এখানে। বিভিন্ন প্রকল্পের কথাও তাঁরা জানতে পারেন। কেউ মেলা বয়কট করলে সেটা তাঁদের ব্যাপার। গোন্দলপাড়া চটকল খোলার জন্য শ্রম দফতরের চেষ্টার খামতি নেই। দ্রুত এই চটকল খোলার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’
এ দিন চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতি, সবুজের অভিযান এবং অসংগঠিত শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরাও মৃত শ্যামা দাসের বাড়িতে যান। পরিবারের লোকজনের হাতে খাদ্যসামগ্রী এবং নগদ দু’হাজার টাকা তুলে দেন তাঁরা।