উপভোক্তা নির্বাচন নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েতগুলি। আক তার জেরে হুগলির আরামবাগ ব্লকে থমকে গিয়েছে ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পের কাজ।
পঞ্চায়েত প্রধানদের অন্ধকারে রেখে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সদস্যরা উপভোক্তা নির্বাচন করেছেন, এই অভিযোগ তুলে অধিকাংশ পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকল্পটি রূপায়ণে কোনওরকম তদ্বির করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ব্লক প্রশাসনকে। এই পরিস্থিতিতে জেলার বাকি ১৭টি ব্লকের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারায় জেলা প্রশাসন থেকে প্রকল্প রূপায়ণ নিয়ে কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে আরামবাগ ব্লক প্রশাসনকে। জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক দেবময় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরামবাগ ব্লকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পের কাজ বেশ কিছুটা পিছিয়ে। প্রকল্পে গতি আনতে ব্লক প্রশাসনকে বিশেষ নজরদারি করতে বলা হয়েছে।’’ আরামবাগের বিডিও বদরুজ্জামান বলেন, ‘‘গীতাঞ্জলি প্রকল্পে গতি ফেরাতে আমি বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় উপভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। উপভোক্তারা যাতে দ্রুত বাড়ি নির্মাণ করেন সে বিষয়ে পঞ্চায়েত প্রধানদের নজরদারি করতে বলা হয়েছে।’’
হুগলি জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে জেলার ১৮টি ব্লকে এই প্রকল্পে ১৬৮০টি গৃহ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ হয়। উপভোক্তা পিছু বরাদ্দ ৭০ হাজার টাকা। বলাগড়, চন্ডীতলা ১ ও ২, চুঁচুড়া-মগরা, ধনেখালি, হরিপাল, জাঙ্গিপাড়া, খানাকুল ১ ও ২ ইত্যাদি প্রায় সমস্ত ব্লকেই উপভোক্তারা প্রথম কিস্তির শর্ত পূরণ করে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন। গৃহ নির্মাণও প্রায় সম্পূর্ণ বলে জেলা প্রশাসনের কাছ রিপোর্ট পৌঁছেছে। সেখানে আরামবাগ ব্লকে একই আর্থিক বছরে বরাদ্দকৃত ১৬০টি গৃহের একটিরও নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এসে ব্লকে পড়ে আছে প্রায় তিন মাস। প্রথম কিস্তির শর্ত পূরণ করে দ্বিতীয় কিস্তির আরও ৩৫ হাজার টাকার দাবিদার মাত্র ৮৪ জন।
এই প্রকল্পে উপভোক্তা নির্বাচনের জন্য ব্লক পিছু একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যস্তর থেকেই। কমিটিতে আছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক, মহকুমাশাসক, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত প্রধানরা। কিন্তু বহু প্রধানের অভিযোগ, তাঁদের অন্ধকারে রেখে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং কিছু প্রভাবশালী সদস্য ইচ্ছামত উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করেছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রকৃত অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল পরিবারকে বঞ্চিত করে স্বজনপোষণ হয়েছে। আর তার জেরে বঞ্চিত পরিবারগুলির ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামলাতে হচ্ছে পঞ্চায়েতকে। সেই কারণেই গীতাঞ্জলি প্রকল্প নিয়ে ওই সব প্রধানেরা তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। আরামবাগের মায়াপুর-১ পঞ্চায়েতের প্রধান তুষার কান্তি দাসের অভিযোগ, ‘‘আমার পঞ্চায়েতে আমার সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা না করেই পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিশির সরকার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ (দলনেতাও) বাণেশ্বর চিনা নিজেদের ইচ্ছামত বেনিফিশিয়ারিদের তালিকা তৈরি করেছেন। আর এখন আমাকে বলা হচ্ছে ওই বাড়িগুলির কি হাল তার রিপোর্ট পাঠাতে। সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাবেই আমি বলে দিয়েছি আপনারা তালিকা করেছেন, আপনারাই রিপোর্ট তৈরি করুন। বাড়ি নির্মাণ হোক না হোক আপনারাই শংসাপত্র দেবেন।’’
আরামবাগ পঞ্চায়ত সমিতির সভাপতি শিশির সরকার বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এই প্রকল্পের উপভোক্তা নির্বাচন হয়েছে। সমস্ত প্রধানদের ২ জন করে উপভোক্তা নির্বাচনের কোটা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের দেওয়া হয়েছে ২টি করে কোটা। বিধায়ক, সাংসদ, সভাধিপতি সবার কোটা রাখা হয়েছে।’’ একই বক্তব্য, বাণেশ্বরবাবুরও।