কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে!
তরুণীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে এক প্রবাসী ভারতীয়কে খুঁজছিল উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। তদন্তে নেমে ভিন রাজ্য থেকে তারা ধরে আনল তিন বিদেশিকে। তদন্তকারীদের দাবি, প্রবাসী ভারতীয় পরিচয় দিয়ে ধৃতরাই ওই তরুণীর পরিবারের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল।
ধৃতদের নাম জন মনসা, জন মাইকেল এবং ইবো ফ্রাইডে। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার জানান, ধৃতদের কাছ থেকে কয়েকটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ডলার, ভারতীয় টাকা, সচিত্র পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত নথিপত্র, চেকবই প্রভৃতি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কমিশনারেট সূত্রের দাবি, ধৃতেরা দোষ কবুল করেছে। দিল্লির আদালতে ট্রানজিট রিম্যান্ড নিয়ে মঙ্গলবার তাদের উত্তরপাড়ায় আনা হয়। ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘‘ চক্রে আরও কেউ জড়িত কি না, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, উত্তরপাড়ার এক তরুণীর সঙ্গে কয়েক মাস আগে ইন্টারনেটে বিয়ের বিজ্ঞাপনের সাইটে আদর্শ খুরানা নামে এক যুবকের পরিচয় হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। বিয়ের কথাবার্তা প্রায় পাকা হয়ে যায়। যুবকটি জানান, তিনি দিল্লির বাসিন্দা। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে নিউ ইয়র্কে থাকেন। মার্চ মাসের গোড়ায় দেশে ফেরার কথা জানান তিনি।
তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, ১৩ মার্চ তরুণীকে যুবকটি জানান, তাঁর জন্য অনেক গয়না নিয়ে দেশে ফিরছেন। দিল্লি বিমানবন্দরে কাস্টমস সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছেন। সে জন্য টাকা লাগবে। কিন্তু নগদ এত টাকা তাঁর কাছে নেই। তরুণীর পরিবার তাঁর কথায় বিশ্বাস করে কয়েক দফায় প্রায় ৭ লক্ষ টাকা পাঠায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। পরের দিন দিল্লি থেকে কলকাতায় আসার বিমান ধরার কথা জানান তিনি। নির্ধারিত দিনে ওই তরুণী এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা দমদম বিমানবন্দরে গিয়ে আদর্শ খুরানা নামে কাউকে দেখতে পাননি। তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যায়নি। ওই নামের কারও খোঁজও মেলেনি।
পরিবারটি বুঝতে পারে, তারা প্রতারিত হয়েছে। ১৬ মার্চ উত্তরপাড়া থানায় এফআইআর করা হয়। তদন্তে নেমে দিল্লি, নয়ডা এবং গুরুগ্রামের কয়েকটি এটিএমের সূত্র পান তদন্তকারীরা। চন্দননগর কমিশনারেটের এসিপি মল্লিকা গর্গ এবং উত্তরপাড়ার আইসি মধুসূদন মুখোপাধ্যায়ের তদারকিতে পুলিশের একটি দল দিল্লিতে যায় তদন্তকারী অফিসার উৎপল সাহার নেতৃত্বে। বেশ কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন এটিএম কাউন্টারে গিয়ে তথ্য এবং সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা তোলার ক্ষেত্রে এক সিসিটিভি ফুটেজে নাইজেরীয়র ছবি ধরা পড়ে। এর পরেই পুলিশ ওই তিন নাইজেরীয়কে খুঁজে বের করে।
কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ভারতে ধৃতদের আত্মীয়েরা থাকেন। এ দেশে তাদের ঘনঘন যাতায়াত রয়েছে।’’ ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘সিসিটিভি-র ফুটেজই সাফল্য আনল।’’