প্রাক্তন পুলিশকর্মীকে চপারের কোপ

বাড়ির নীচের দোকানের সামনে নিজের মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলেন হুগলি জেলা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্মী। সেই সময় ওই দোকানদার বেরিয়ে এসে তাঁকে চপারের কোপ মারে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
Share:

চুঁচুড়ায় ঘটনাস্থলে তদন্তে পুলিশ।

বাড়ির নীচের দোকানের সামনে নিজের মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলেন হুগলি জেলা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্মী। সেই সময় ওই দোকানদার বেরিয়ে এসে তাঁকে চপারের কোপ মারে বলে অভিযোগ।

Advertisement

শনিবার দুপুরে এই ঘটনাকে ঘিরে সরগরম হয়ে ওঠে চুঁচুড়ার তিন নম্বর গেট এলাকা। দীপক কোয়েড়ি নামে অবসরপ্রাপ্ত ওই পুলিশকর্মী প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী নরেন দে’র দেহবরক্ষী ছিলেন। তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত প্রদীপ দাস পলাতক। তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় দোকানপাট বন্ধ ছিল। একমাত্র প্রদীপের দোকান খোলা ছিল। তাই তার দোকানের সামনে মোটরবাইক রেখেছিলাম। এটাই আমার অপরাধ। কিছু বুঝে ওঠার আগে দোকান থেকে চপার বের করে সে আমাকে মারতে থাকে।’’

Advertisement

শুধু কি বাইক রাখার অপরাধে এই হামলা? না কি অন্য কোনও কারণ রয়েছে? জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীপকবাবুর বাড়ি জীবন পালের বাগান এলাকায়। আর অভিযুক্ত যুবক প্রদীপের বাড়ি কারবালা এলাকার ঋষিকেশ পল্লিতে। দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে তিনি দীপকবাবুর বাড়ির নীচে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবসা করছেন। এ দিন দুপুর ৩টে নাগাদ কাজ শেষে বাড়ি ফেরেন দীপকবাবু। ওই সময় এলাকার প্রায় সব দোকান বন্ধ ছিল। খোলা ছিল তাঁর বাড়ির নীচে ওই যুবকের দোকান। তাই দীপকবাবু গাড়িটি বাড়িতে না ঢুকিয়ে ওই দোকানের সামনে রাখেন।

হাসপাতালে জখম অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। ছবি: তাপস ঘোষ।

মোটরবাইক তিনি কেন সেখানে রেখেছেন, তাই নিয়ে দু’জনের মধ্যে বচসা বেধে যায়। অভিযোগ, ওই যুবক দোকান থেকে বেরিয়ে এসে দীপকবাবুর বাইকটি ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর বচসা ক্রমশই চরমে ওঠে। হঠাৎই প্রদীপ দোকানের ভিতর থেকে একটি চপার নিয়ে এসে দীপকবাবুর উপর হামলা করেন। দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি বেধে যায়। নিজেকে সামলাতে না পেরে দীপকবাবু পড়ে যান। তখন অভিযুক্ত যুবক চপার দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপান। রক্তাক্ত অবস্থায় দীপকবাবু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁর চিৎকার শুনতে পেয়ে স্থানীয় এক ওষুধ ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারাও ছুটে আসেন। অবস্থা বেগতিক বুঝে অভিযুক্ত ওই যুবক দোকান ছেড়ে চম্পট দেন। দীপকবাবুকে চিকিৎসার জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মোট ২৯টি সেলাই করা হয়।

এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার বাসিন্দারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। উত্তেজিত কিছু যুবক অভিযুক্তের দোকান ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। পুলিশ এসে অভিযুক্তের দোকানে তালা মেরে দেয়। এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযুক্ত প্রদীপের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রদীপবাবু দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ব্যবসা করছেন। কিন্তু কোনও ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর ভাল সম্পর্ক ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দা ওষুধ ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ মজুমদার বলেন, ‘‘ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়েছিলাম। দীপকবাবুর চিৎকার শুনে বেরিয়ে আসতেই দেখি প্রদীপ দীপকবাবুকে একটা চপার দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাচ্ছে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ডাকি। কোনওক্রমে প্রদীপকে ছাড়াই। স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে ছুটে এলে প্রদীপ দোকান ফেলে রেখে পালায়। সময়মতো না পৌঁছলে হয়তো দীপকবাবুকে মেরেই ফেলত সে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement