প্রতীকী ছবি
তাঁরা প্রান্তিক চাষি। নিজের হাতে চাষ করেন। কিন্তু জমির মালিক নন। তাই ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প থেকে তাঁরা ব্রাত্য!
আমপানের পরে ওই প্রকল্পে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু হাওড়া জেলার প্রান্তিক চাষিদের তাতে লাভ হচ্ছে না। তাঁদের ক্ষোভ-হতাশা বাড়ছে। আইনের ফাঁক গলে সরকারি টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন জমির মালিকেরা। যাঁদের প্রায় সকলেই সম্পন্ন।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই প্রকল্পের গাইড-লাইনে বলা আছে, চাষিকে টাকা পেতে হলে তাঁর নামে জমির দলিল এবং পরচা থাকতে হবে। কিন্তু ঠিকা বা প্রান্তিক চাষিদের তা নেই। সেই কারণে তাঁরা সরকারি প্রকল্পের টাকা পাচ্ছেন না। একই কারণে আটকে গিয়েছে আমপানের ক্ষতিপূরণের টাকাও।
আইনের গেরোতেই যে এই সমস্যা, তা মানছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদেরই একজন বলেন, ‘‘সমস্যাটি শুধু হাওড়ার নয়। গোটা রাজ্যের। বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে।’’
খাতায়-কলমে অন্যের জমিতে চাষ করেন, হাওড়ায় এমন চাষির সংখ্যাই বেশি। অন্তত ৫০ হাজার। আমপানের পরে তাঁদের শোচনীয় অবস্থা। অনেকে এখনও চাষই শুরু করতে পারেননি। মরশুমে। গত বছর প্রকল্পটি চালু করার সময় সরকারের উদ্দেশ্য ছিল, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা রোগপোকার কারণে ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের হাতে ফের চাষ করার টাকা তুলে দেওয়া।
‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে এ বছর আমন মরসুমের কিস্তি দেওয়া শুরু হয়েছে। যে হেতু, আমপানে চাষের বেশ ক্ষতি হয়েছে, তাই এ মরশুমের প্রাপ্য কিস্তির সঙ্গে এক হাজার টাকা করে বেশি দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, যিনি এক হাজার টাকা পেতেন, তিনি পাবেন দু’ হাজার টাকা। যিনি আড়াই হাজার টাকা পেতেন, তিনি পাবেন সাড়ে তিন হাজার টাকা।
কিন্তু প্রান্তিক চাষিদের ক্ষোভ, এতে তাঁদের লাভ কোথায়?
তাঁরা এক-একটি মরসুমে মালিকের কাছ থেকে থোক চাকার বিনিময়ে জমি ঠিকা নিয়ে চাষ করেন। সার,
বীজ প্রভৃতি কিনতে হয় তাঁর নিজের টাকায়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা পোকার উপদ্রবে চাষের ক্ষতি হলে তাঁরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু ক্ষতিপূরণের কিছুই মেলে না।
শুধু ডোমজুড় ব্লকেই মোট চাষির সংখ্যা ৪ হাজার। তার মধ্যে দলিল-পরচা থাকার সুবাদে ‘কৃষকবন্ধু’ এবং তার সঙ্গে আমপানের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন মাত্র ১৯৩৪ জন। বাকিরা অন্যের জমিতে চাষ করায় সেই সুবিধা পাননি।
ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জমি-মালিকদের অধিকাংশই নিজেরা চাষ করেন না।
চাষিদের জমি ঠিকায় দিয়ে দেন। সেই চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে বহুবার এই সমস্যার কথা বলেছি। প্রকল্পের সুফল প্রকৃত চাষিরা না পেলে এর উদ্দেশ্যই তো ব্যর্থ হয়ে যায়। প্রয়োজনে আইন বদল করা উচিত।’’