প্রতীকী ছবি।
কোভিড ভ্যাকসিন নিতে হবে, জানতামই। মানসিক প্রস্তুতিও ছিল। শনিবার সকালে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে গগিয়ে নিয়ে নিলাম। সঙ্কোচ বা সংশয়ের প্রশ্নই ছিল না। প্রোটোকল মেনে আধ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে বসেছিলাম। কোনও শারীরিক সমস্যা হয়নি।
আমার এখন ৫৭ বছর বয়স। ১৯৯০ সাল থেকে নার্সের পেশায় যুক্ত। কলকাতার শরৎ বোস রোডে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে সেখানে দু’বছর কাজ করি। ’৯২ থেকে ’৯৪ সাল পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে সরকারি হাসপাতালে ছিলাম। তার পরে টানা ২০১৫ সাল পর্যন্ত শম্ভুনাথ হাসপাতাল। সেখানে থাকাকালীন উচ্চশিক্ষা। ২০১৫ সালে সিস্টার-ইনচার্জ হিসেবে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালের ফিমেল জেনারেল ওয়ার্ডে যোগ দিই। করোনার গোড়া থেকে এখানেই কর্মরত ছিলাম। ভয় পাইনি। বরং প্রথম দিন থেকেই মনে হয়েছিল, সাহসের সঙ্গে মানুষের পাশে থেকে সেবা করতে হবে। কেননা, অজানা অসুখ তো এ ভাবেই আসে। নিয়ম মেনে চললে করোনা মোকাবিলা সম্ভব। সহকর্মীদেরও তাই বলেছি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, আমাদের ওয়ার্ডে ভর্তি কোনও মহিলার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ। তাতেও ভয় পাইনি। লকডাউনের শুরুতে টানা সাত দিন বাড়ি যাইনি। হাসপাতালেই ছিলাম। সেই সময় আলাদা করে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, তা নয়। তবে পিপিই পরা, খোলা এবং তা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে আমাদের কেউ সংক্রমিত হননি। ডিসেম্বর মাস থেকে আমি মেন অপারেশন থিয়েটারের সিস্টার-ইনচার্জের দায়িত্ব সামলাচ্ছি।
শনিবার নাইট ডিউটি ছিল। ছুটি নিইনি। দরকারও নেই। কেননা, এর অনুভূতি সাধারণ ইঞ্জেকশনের থেকে আলাদা কিছু নয়। আমি বৈদ্যবাটীর মাটিপাড়ায় থাকি। করোনা-পর্বে হাসপাতালে নিজের কাজ, সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও বাড়ির লোকেদের নজর রাখতে হয়েছে। পাড়া-পড়শিদেরও করোনার গোড়া থেকে নিয়ম মানার কথা বলে এসেছি। এখনও বলি।
করোনা এখনও পুরোপুরি চলে যায়নি। মাস্ক পড়া, বারবার হাত ধোওয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা এখনও রয়েছে। এটা সবাই যত মেনে চলবেন, তত ভাল।
করোনা-পর্বে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেককে এলাকাবাসীর হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। আমাকে তা তো হয়ইনি, উল্টে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন। সেই সাধুবাদ আজও পেলাম। করোনার টিকা নিলাম শুনে অনেকেই সাধুবাদ জানাচ্ছেন। অন্যদের এ বার উৎসাহ দেব।
বলব, নিঃসঙ্কোচে টিকা নিন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।