অপচয়: শ্রীরামপুরের ঘাটে পড়ে রয়েছে ভেসেল। নিজস্ব চিত্র
চার-চারটি আধুনিক ভেসেল পড়ে রয়েছে। অথচ, শ্রীরামপুরের যুগল আঢ্য ফেরিঘাট এবং ব্যারাকপুরের ধোবিঘাটের মধ্যে এখনও পারাপারের মাধ্যম পুরনো ভুটভুটিই!
কারণ, ধোবিঘাটে এখনও পাকা জেটি তৈরি হয়নি। ফলে, শ্রীরামপুর ফেরিঘাটে স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ভেসেলগুলি। দুই ফেরিঘাটের ইজারাদার তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভেসেল পড়ে থাকলে নষ্ট তো হবেই। ওই পাড়ে জেটি তৈরি না হলে ভেসেলগুলি চালানোর উপায় নেই। ওই জেটি কবে তৈরি হবে, বুঝতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিবহণ দফতরের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
দুই ঘাটের মধ্যে ফেরি চলাচল শুরু হয় বহু বছর আগে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী-সহ প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ দুই ঘাট দিয়ে পারাপার করেন। ঘাট কর্তৃপক্ষের তরফে তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বছর দুয়েক আগে রাজ্য সরকারের ভর্তুকিতে ‘জলধারা’ প্রকল্পে দু’টি ভেসেল কেনা হয়। একটি বোটের লাইসেন্স তাঁর নামে রয়েছে। অন্যটি আর এক জনের নামে। বোট দু’টি স্টিলের পাতের তৈরি। এক-একটির দাম ৩৩ লক্ষ টাকা। রাজ্য সরকার এক লক্ষ টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। আট মাস আগে রাজ্যের পরিবহণ দফতরের তরফে আরও দু’টি ভেসেল দেওয়া হয় শ্রীরামপুর পুরসভার মাধ্যমে। সেগুলির এক-একটির দাম ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি। প্রত্যেকটি ভেসেলে আশি জন যাত্রী পারাপার করতে পারেন। কিন্তু চারটি ভেসেলই শ্রীরামপুরের জেটিতে বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
শ্রীরামপুরের পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভেসেলগুলি পড়ে নষ্ট হওয়ায় খুবই খারাপ লাগছে। কিন্তু ওই পাড়ে জেটি তৈরি না-হলে আমাদের কিছুই করার নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক বার সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি। ফের পরিবহণ দফতরে চিঠি দেব।’’
গোড়ায় দুই ফেরিঘাটের মধ্যে নৌকা চলত। পরে আসে ভুটভুটি। এক সময় লঞ্চও চলত। কিন্তু গঙ্গার নাব্যতা কমে যাওয়ায় লঞ্চ বন্ধ হয়ে ভুটভুটি ফিরে আসে। শ্রীরামপুরের দিকে ১৯৯৪ সালে পাকা জেটি তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তেলেনিপাড়ায় অস্থায়ী বাঁশের জেটি দুর্ঘটনায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর পরে রাজ্য জুড়েই বিভিন্ন ফেরিঘাটের হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয় সরকার। কিন্তু ব্যারাকপুরের দিকে অস্থায়ী জেটিই এখনও ভরসা। তার আবার অনেক জায়গায় রেলিং নেই। ওই দুর্ঘটনার কয়েক মাস পরেই শ্রীরামপুরে ফেরিঘাট পরিদর্শনে এসে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন, ব্যারাকপুরের দিকে পাকা জেটি তৈরি হলেই এখানে ঝুঁকিপূর্ণ ভুটভুটি তুলে ফেলা হবে। পারাপার হবে ভেসেলে।
গত বছরের গোড়ার দিকে ব্যারাকপুরের দিকে পাকা জেটি তৈরির কাজ শুরু হয়। গত মার্চ মাসের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও হয়নি। মাঝপথেই ওই কাজ থমকে রয়েছে। তরুণের কথায়, ‘‘ভেসেলগুলো পড়ে থাকায় অনেক টাকা নষ্ট হচ্ছে। কাজে না-লাগলে এর পিছনে খরচ করা টাকাও তো উঠবে না। কী যে করি!’’
নিত্যযাত্রীরাও চাইছেন, ভুটভুটির বদলে আধুনিক ভেসেল চালু হোক। কারণ, ভুটভুটিতে চলাচল বিপজ্জনক। ভেসেল অনেক সুরক্ষিত।