নজরদারির গাফিলতিতেই রমরমা প্লাস্টিকের

পুরভবনে আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব। শহরবাসীর নানা দাবি, প্রাপ্তি-প্রত্যাশার বিষয় ওঠে আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।রাস্তাঘাট খুব খারাপ। সংস্কার হচ্ছে না কেন? রাস্তায় জল জমার সমস্যা নিয়ে পুরসভার কী ভাবনা? শব্দবাজি বা জোরে সাউন্ড বক্স বাজানো বন্ধ করার ব্যাপারে পুরসভা উদ্যোগী হবে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০২:০৯
Share:

কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে যাচ্ছে জলাশয়। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

Advertisement

রাস্তাঘাট খুব খারাপ। সংস্কার হচ্ছে না কেন? রাস্তায় জল জমার সমস্যা নিয়ে পুরসভার কী ভাবনা? শব্দবাজি বা জোরে সাউন্ড বক্স বাজানো বন্ধ করার ব্যাপারে পুরসভা উদ্যোগী হবে?

দেবাশিস দাস(নাট্যকর্মী), ১৪ নম্বর ওয়ার্ড

Advertisement

পুরপ্রধান: পুর-এলাকার অনেক রাস্তা যে বেহাল, অস্বীকার করছি না। কিছু রাস্তা ভালভাবে সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অনুমোদন চেয়েছিলাম। রাজ্য ২ কোটি টাকা দিয়েছে। বিধানসভা ভোট এসে যাওয়ায় কাজ করা যায়নি। সংশ্লিষ্ট দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, প্রাক-বর্ষা বা বর্ষার মরসুমে রাস্তা সংস্কার করলে পুরো টাকা জলে যাওয়ার সম্ভাবনা। কেন না, বিটুমিন ঢালার দিন সাতেকের মধ্যে বৃষ্টি হলে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। বর্ষা কাটলেই কাজে হাত দেওয়া হবে। কোতরং-এ জল জমার সমস্যা সমাধানের জন্য ৬৫ লক্ষ টাকা খরচ করে পাইপ বসানো এবং হাইড্রেন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান যে সব এলাকায় হচ্ছে সেখানে দু’মাস আগে নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছে, ডিজে বক্স বাজানো চলবে না। বিয়েবাড়ি যাঁরা ভাড়া দেন, তাঁদের বৈঠকে ডেকেও এ কথা বলে দেওয়া হয়েছে।

শহরে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করতে আপনি উদ্যোগী হয়েছিলেন। ফের প্লাস্টিকে শহর ছেয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে পুরসভা কী আর উদ্যোগী হবে না? মাঝে মধ্যে দেখি রাস্তার মধ্যে আবর্জনা স্তূপাকারে জমে থাকে। সেগুলি ঝাড়াই-বাছাই করেন কিছু মহিলা-পুরুষ। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিতে হয়।

সৈকত ভট্টাচার্য(ব্যবসায়ী), ১ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: পুরপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই প্লাস্টিক বন্ধে উদ্যোগী হয়েছিলাম। রীতিমতো দল করে বাজারে-বাজারে ঘোরা, মিটিং-মিছিল করা সবই করেছি। কিন্তু সমস্যাটা হল, নজরদারি একটু কমলেই ব্যবসায়ীদের একাংশ প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ চালু করে দিচ্ছেন। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে যাঁরা পুরসভার চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেনন, এমন লোকজনের হাতেও প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ দেখছি এখন। মানুষকে যে সচেতন করা যায়নি, এটা দুর্ভাগ্যের। তবে নিরাশ হইনি। এ ব্যাপারে ফের কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। শহরের তিনটি জায়গায় আবর্জনা ফেলে বাছাবাছি করা হতো। এখন দু’টো জায়গায় এটা প্রায় বন্ধ। অন্যটাও বন্ধ করা হবে। এখন শহরের প্রায় সব আবর্জনাই মাখলায় সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে চলে যাচ্ছে। সেখানে পচনশীল আবর্জনা দিয়ে সার তৈরি হচ্ছে। আর অপচনশীল জিনিস ওখান থেকেই বেছে নিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট লোকজন। শহর এখন অনেক বেশি সাফসুতরো।

মাখলায় জলের সমস্যা এখনও মেটেনি। কবে মিটবে?

রথীন্দ্রমোহন সরকার (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী), ২৩ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত করতে রাজ্য ৩০ কোটি টাকা দিয়েছে পুরসভাকে। এই টাকায় কোতরং ও মাখলায় ওভারহেড রিজার্ভার করা হবে। জলের ট্যাঙ্ক সংস্কার করা হবে। মাটির নীচেও রিজার্ভার করার ভাবনা রয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই প্রত্যেক বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারব বলে আমি আশাবাদী।

মশা মারতে মাঝে মধ্যে নর্দমায় কীটনাশক স্প্রে করা হয়। কিন্তু মশা যাতে না জন্মায়, তার ব্যবস্থা করা হয় না? শহরের অনেক জলাশয় কার্যত আঁস্তাকুড়ের চেহারা নিয়েছে। ডোবা-পুকুর সংস্কার করে তাতে মাছ চাষ করলে মনে হয় ভাল ফল পাওয়া যাবে।

শশাঙ্ক কর (পরিবেশ কর্মী), ১০ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: পুকুর সংস্কার করতে পুরসভার তরফে মালিকদের নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিছু লোক উদ্যোগী হয়ে পুকুর সংস্কার করেন। কিন্তু সংখ্যাটা খুবই কম। সমস্যাটা হল, অনেক ক্ষেত্রেই পুকুরের একাধিক শরিক। কিছু পুকুর নিয়ে মামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের চেষ্টা সফল হয়নি।

স্টেট জেনারেল হাসপাতালে শুয়োর ঘুরে বেড়ায়। মাখলাতেও তাই। এতে রোগ ছড়াতে পারে। এ ব্যাপারে পুরসভার কী ভাবনা?

সুরেন্দ্র যোশেফ (ব্যবসায়ী), ২২ নম্বর ওয়ার্ড

পুরপ্রধান: আগে হাসপাতাল চত্বরে যে ভাবে শুয়োর ঘুরে বেড়াত, এখন তেমনটা হয় না। রেল স্টেশনের ধারে একটি জায়গায় শুয়োরদের থাকার জায়গা হয়েছে। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে দু’-একটা শুয়োর হয় তো হাসপাতালের পিছন দিক দিয়ে ঢুকে পড়ে। এটা কী ভাবে আটকানো যায়, আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement