মণ্ডপে মণ্ডপে তুমুল ব্যস্ততা। বাজারে বাজারে উপচে পড়া ভিড়। শারদ উৎসবে মেতে ওঠার তোড়জোড় এখন সর্বত্রই। কিন্তু উৎসবের রং ফিকে হুগলি শিল্পাঞ্চলে। কারণ, একদিকে, বন্ধ কারখানা খোলার দিশা নেই, অন্য দিকে ধুঁকতে থাকা চটকলগুলির শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরোচ্ছে। ফলে, শিল্পাঞ্চল জুড়ে হতাশার মেঘ।
হুগলির অন্যতম বড় কারখানা বলতে ছিল উত্তরপাড়ার হিন্দুস্থান মোটরস। ২৪০০ শ্রমিক কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে সেই কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকেই অন্ধকারে রয়েছেন সেখানকার শ্রমিকেরা। চালু অবস্থায় কারখানা চত্বর সব সময় রমরম করত। বালি, বেলুড়, উত্তরপাড়া, হিন্দমোটর, কোন্নগর, রিষড়ার বিস্তৃত অঞ্চলের বাজার আবর্তিত হতো কারাখানার ওঠাপড়ার সঙ্গে।
শ্রমিকদের আক্ষেপ, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারখানার প্রযুক্তিগত আধুনিকীকরণের কাজে হাত দেননি কর্তৃপক্ষ। মানুষের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বদল আনা হয়নি গাড়ির প্রযুক্তি এবং নকশায়। ফলে, যা হওয়ার তাই-ই হয়েছে। অ্যাম্বাসাডার গাড়ির চাহিদা থাকলেও বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে হার মেনেছে কারখানা। শ্রমিক সংখ্যা কমিয়ে, কারখানার একাংশ (টিটাগড় ওয়াগন লিমিটেড) এবং জমির বিক্রির রাস্তায় গিয়েও কারখানার অধোগতি ঠেকানো যায়নি। শ্রমিকদের দায় মাথায় নিয়ে কোনও গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাই কারখানা কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়নি। তাই শারদ উৎসবে আলো জ্বলে না কারখানার খাঁ-খাঁ চত্বরে।
একই দশা জেলার অন্য প্রান্তে ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জেরও। সেখানকার ডানলপ টায়ার কারখানা নামেই খোলা। উৎপাদন নেই। অথচ, এক সময়ে এই কারখানাই ছিল এলাকার অর্থনৈতিক ওঠাপড়ার ভিত্তি। এক দশক জুড়ে এখানকার শ্রমিকেরা শুনে এসেছেন কর্তৃপক্ষ আর সরকারের গালভরা আশ্বাস। যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মেলানো যায়নি বাস্তবকে। পুজোর আবহে তাই শ্রমিকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া হয়েছে।
এই দুই কারখানার মধ্যে রিষড়া থেকে বাঁশবেড়িয়া পর্যন্ত হুগলির গঙ্গার ধার বরাবর ১৪টি চটকলের শ্রমিকদের অবস্থাও দিন দিন সঙ্গিন হচ্ছে। পুজোর আনন্দ তাঁরা আর পান না। কারণ, পাটের দিন গিয়েছে। চটকলগুলি খুঁড়িয়ে চলছে। আগের মতো বরাত তারা পায় না। তার ধাক্কা পৌঁছচ্ছে শ্রমিক-পরিবারেও। কর্তৃপক্ষের নিত্যনতুন ফরমানের জেরে গোলমালও লেগে থাকছে চটকলগুলিতে। অবনতি হচ্ছে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কেরও।
এই অবস্থায় শারদ উৎসব আর কোনও নতুন বার্তা আনছে না শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক মহল্লায়।