নিকাশি নালার হাল দেখানো হচ্ছে মহকুমাশাসককে (সাদা জামা)। বৃহস্পতিবার শ্রীরামপুের। ছবি: প্রকাশ পাল
ডেঙ্গি নিধনে কোমর বেঁধে অভিযান শুরু হল শ্রীরামপুরে। জমা জল এবং জঞ্জাল খুঁজে বের করতে বৃহস্পতিবার শহরের আকাশ থেকে নজরদারি শুরু করল ড্রোন। পথে নামলেন মহকুমাশাসকও। বিজেপির অভিযোগ, ডেঙ্গি রোধে পুরসভা ব্যর্থ।
২০১৬ সালে এই শহরে ডেঙ্গি ছেয়ে গিয়েছিল। শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি ‘মহামারি’ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। এ বার দুর্গাপুজোর সময় থেকে ফের মশাবাহিত এই রোগ শ্রীরামপুরকে ভোগাচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে শহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কেএল গোস্বামী সরণির পাঁচ বছরের এক শিশু ডেঙ্গিতে মারা যায়। পরের দিনই জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী-সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা শ্রীরামপুরে ডেঙ্গি মোকাবিলায় বৈঠক করেন। জোরদার অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়ম অনুযায়ী সাফাই অভিযান হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন। ২১, ২২ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিশেষ অভিযান চলে। অতিরিক্ত ৩০ জন পুরকর্মী নামিয়ে সেখানে আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়। মশার লার্ভা মারতে তেল ছড়ানো হয় এবং মশা মারতে ধোঁয়া দেওয়া হয়। সচেতনতা ছড়াতে মাইকে প্রচার, প্ল্যাকার্ড, ব্যানার হাতে পদযাত্রা— কিছুই বাদ ছিল না।
ওই অভিযানে শামিল হন মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) তনয় দেব সরকার এবং পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়ও। রেল লাইনের ধারে একটি বন্ধ কারখানার জমিতে হওয়া আবাসন প্রকল্পের ভিতরে তাঁরা যান। পুরসভা সূত্রের খবর, সেখানে মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই ঘেরা চত্বরে পুরকর্মীরা ঢুকতে পারেন না।’’ আবাসনের লোকেরা দাবি করেন, মশা মারতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, এ বার থেকে পুরসভার সাফাইকর্মীরা যাতে সেখানে ঢুকতে পারেন, সেই ব্যবস্থা হচ্ছে। ওই আবাসন প্রকল্পের চৌহদ্দি এবং আশপাশে ড্রোন ওড়ানো হয়। গাঙ্গুলিবাগান আবাসন, দমকল কেন্দ্র, পশু চিকিৎসালয়, আদালত, ওয়ালশ হাসপাতাল, মহকুমাশাসকের বাংলো প্রভৃতি জায়গাতেও ড্রোনের নজরদারি চলে।
প্রশাসনের আধিকারিকরা জানান, পরিত্যক্ত বা অন্য কয়েকটি জায়গায় নানা কারণে পুরকর্মীরা যেতে পারেন না। সেখানে ড্রোন পাঠিয়ে দেখা হচ্ছে, জল বা আবর্জনা রয়েছে কিনা। থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জিটি রোডের ধারে আরও একটি নির্মীয়মাণ আবাসন চত্বরে ড্রোন ওড়ানো হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের খবর।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডে খাটালের গোবর এবং আবর্জনা পড়ে নিকাশি আস্তাকুঁড়ের চেহারা নিয়েছে। সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দার অবশ্য ক্ষোভ, ‘‘ওই নালা ভাল ভাবে পরিষ্কার হয় না। জায়গাটি মশার আঁতুড়ঘর হয়ে গিয়েছে।’’ ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে তিনি ওই নালা ভাল ভাবে সংস্কারের দাবি জানান পুরকর্তাদের কাছে।
মহকুমাশাসক বিভিন্ন খাটাল, বাড়ি এবং নিকাশি নালা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। খাটাল মালিক-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করতে পুরকর্তাদের পরামর্শ দেন তিনি। মহকুমাশাসকের কথায়, ‘‘পুরসভার তরফে পরিষ্কার করা হলেও সচেতনতার অভাবে কিছু নর্দমা ফের ভীষণ নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সব পক্ষকে নিয়ে বসে সচেতনতা বাড়াতে মানুষের কাছে আবেদন করা হবে।’’ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এত পরিষ্কার করা সত্ত্বে্ও নর্দমা বুজে রয়েছে। কিছু মানুষ সব কিছুই নর্দমায় ফেলছেন। সমস্যা হচ্ছে, নর্দমার আবর্জনা তুলে রেল লাইনের ধারে ফেলতে হয়। রেল সব সময় সেই অনুমতি দেয় না।’’
এ দিন শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউতে একটি মার্কেট কমপ্লেক্সে তালা ঝুলিয়ে দেন পুরকর্মীরা। স্থানীয় কাউন্সিলর সন্তোষ সিংহের দাবি, বার বার বলা সত্ত্বেও ওই বাজার চত্বর পরিষ্কার করছিলেন না সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অথচ ভিতরে মশার লার্ভা রয়েছে। সেই কারণেই তালা দিয়ে দেওয়া হয়। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিষ্কারের লিখিত আশ্বাস দেওয়ায় তালা খোলা হয়।