আবাসনের ভিড়ে পথ হারিয়েছে নিকাশি

লাফিয়ে বাড়ছে জমির দাম। সেখানে মাথা তুলছে বহুতল। ক্রমশ আধুনিক হতে চলা ডোমজুড়ের মানুষের নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য কেমন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থেকেই যায়। গত কয়েক বছরে বহরে অনেকটাই বেড়েছে এই শহর। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটের অনেকটাই চেহারা ফিরেছে। সম্প্রতি স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ডোমজুড় লাগোয়া হাওড়া-আমতা রোডে লাগানো হচ্ছে ত্রিফলা আলো। হরের পুল সংলগ্ন এলাকায় বসেছে সিসিটিভি। কিন্তু উন্নত শহর হতে গেলে প্রাথমিক যে সব শর্ত জরুরি যেমন উন্নত নিকাশি, পর্যাপ্ত জল সরবরাহ দু’টি বিষয়েই এখনও অনেকটাই পিছিয়ে এই জনপদ।

Advertisement

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

ডোমজুড় শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০১:৪৯
Share:

ক্রমশ বাড়ছে আবাসনের রমরমা।

লাফিয়ে বাড়ছে জমির দাম। সেখানে মাথা তুলছে বহুতল। ক্রমশ আধুনিক হতে চলা ডোমজুড়ের মানুষের নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য কেমন তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থেকেই যায়।

Advertisement

গত কয়েক বছরে বহরে অনেকটাই বেড়েছে এই শহর। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটের অনেকটাই চেহারা ফিরেছে। সম্প্রতি স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে ডোমজুড় লাগোয়া হাওড়া-আমতা রোডে লাগানো হচ্ছে ত্রিফলা আলো। হরের পুল সংলগ্ন এলাকায় বসেছে সিসিটিভি। কিন্তু উন্নত শহর হতে গেলে প্রাথমিক যে সব শর্ত জরুরি যেমন উন্নত নিকাশি, পর্যাপ্ত জল সরবরাহ দু’টি বিষয়েই এখনও অনেকটাই পিছিয়ে এই জনপদ। ন্যূনতম নিকাশি ব্যবস্থাটুকুও নিয়মিত দেখভাল হয় না। প্রাকৃতিক যে সব ব্যবস্থা (পুকুর, জলাশয়) এক সময় এলাকার জমা জল সরে যেতে সাহায্য করত সেগুলিও প্রায় ধ্বংসের মুখে। শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া যে সরস্বতী নদী অন্যতম প্রধান নিকাশি হিসাবে কাজ করত তাও সংস্কারের অভাবে এখন মজা খালে পরিণত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ডোমজুড় ও লাগোয়া এলাকায় চারটি বড় জলাভূমি রয়েছে। বেগড়ি-কোলড়া এলাকার জলাভূমি ও নিমেরহাটি-বন্যাপাড়া এলাকার জলাভূমি দু’টির বেশিরভাগ বুজিয়ে মূলত কারখানা তৈরি হয়েছে। ওএনজিসির মাঠ বলে পরিচিত জলাতেও (জাবদাপোতা অবধি) তৈরি হচ্ছে কারখানা ও আবাসন। হাওড়া-আমতা রোডের ধারে মাগড়ির জলার পাশে মাথা তুলেছে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। তৈরি হচ্ছে আবাসন প্রকল্প। স্থানীয় বাসিন্দা অপরূপ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বাইরে থেকে আপনার মনে হবে সব ঠিক আছে। কিন্তু টানা ভারী বৃষ্টি হলেই আমরা প্রমাদ গুনি। কারণ মূল শহরের জল জলাগুলিতে এসে পড়ে। সেগুলির একাংশ তো বুজছেই, সেই সঙ্গে নিকাশি নালাগুলিও বুজতে বসেছে।’’

Advertisement

অপরূপবাবুর কথা যে ফেলে দেওয়ার নয়, এলাকা ঘুরে তার প্রমাণও চোখে পড়ল। শহরের ভিতরে কোথাও দেখা গেল নর্দমার মুখে জমে রয়েছে নোংরা। কোথাও আবার নর্দমা বুজে যাওয়ায় নোংরা জলে ভাসছে রাস্তা (ডোমজুড় সংলগ্ন মাকড়দহ বাজার এলাকায় এই সমস্যা দীর্ঘদিনের)। স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘বিডিও অফিস লাগোয়া গন্ধগ্রাম এলাকায় নির্দিষ্ট নিকাশির ব্যবস্থা না করেই কয়েকটি আবাসন তৈরি হচ্ছে। ডোমজুড়ে এমন কিছু আবাসন তৈরি হয়েছে বা হচ্ছে যারা সরকারের থেকে ছাড়পত্র নেয়নি।’’

সরস্বতী নদী। এখন যে চেহারায়।

শহরের এ হেন চেহারা নিয়ে কী বলছে ব্লক প্রশাসন?

বিডিও তমোঘ্ন করের কথায়, “বাস্তবে শহর হলেও ডোমজুড় এখনও পঞ্চায়েত এলাকা। ফলে আয়ও কম। তবু সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই নিকাশি সমস্যা মেটানোর জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করছি। তবে সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া দরকার।” পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, জলাশয় বুজিয়ে দেওয়ার অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে আবাসন তৈরির অনুমোদন তাঁরা দেন না। জেলা পরিষদ দেয়। জেলা পরিষদের এক কর্তা জানান, অবৈধ নির্মাণ নিয়ে কেউ যদি অভিযোগ করেন অবশ্যই তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে বেহাল নিকাশিই যে উন্নত ডোমজুড়ের পথে একমাত্র বাধা তা ভাবলে ভুল হবে। রয়েছে মাটির দূষণজনিত সমস্যা। সরকারি নথিতেই প্রকাশ, ২০-২৫ বছর আগে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের একদল অধ্যাপক ডোমজুড়ের মাটির নমুনা পরীক্ষা করে তাতে দূষণের মাত্রা দেখে আঁতকে উঠেছিলেন। পাশাপাশি জলস্তর নেমে যাওয়া এই জনপদের আরও একটি গুরুতর সমস্যা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, আগে ১০০ ফুট মাটি খুঁড়লেই জল পাওয়া যেত। এখন অনেক সময় ৩০০ ফুটেও তা অমিল। কারণ হিসেবে তাঁরা আবাসন প্রকল্পগুলির অনিয়ন্ত্রিত জল উত্তোলনকেই দায়ী করেছেন।

কিন্তু জনসংখ্যার চাপ বাড়লে আবাসনের সংখ্যা বাড়াকে তো অস্বীকার করা যায় না। তা হলে উপায়?

সাহিত্যিক ও ডোমজুড়ের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা উল্লাস মল্লিক বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ডোমজুড়ের কয়েকটি নির্মিয়মাণ আবাসনে গিয়েছিলাম। তার মধ্যে দু’-একটি পরিবেশ দফতরের নিয়ম মেনেছে বলে মনে হল না। তবে শুধু প্রোমোটারদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। সাধারণ মানুষকেও নিজের শহর নিয়ে ভাবতে হবে। সচেতন হতে হবে। বুঝতে হবে শহরের ক্ষতি হলে সকলেরই ক্ষতি।’’ তাঁর অভিযোগ, আর্থিক স্বার্থ সুরক্ষিত করতে অনেকেই বাড়ির পাশের নালায় নোংরা ফেলে বুজিয়ে সেটা নিজের জমি বলে দাবি করছেন।

ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement