স্তূপাকার: আরামবাগ শহরের আবর্জনার সঙ্গে প্লাস্টিকও জমছে দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
প্লাস্টিকের ফিনফিনে ক্যারিব্যাগ বন্ধ করা নিয়ে হুগলি জেলার বহু শহরই উদাসীন। কয়েকটি পুরসভা বিচ্ছিন্ন ভাবে চেষ্টা শুরু করেছিল। কিন্তু করোনা-কালে তাদের উদ্যোগও ‘ভ্যানিশ’। ফলে, স্বমহিমায় ফিরেছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ। তাতে একদিকে নিকাশি ব্যবস্থার ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
পরিস্থিতি যে বেলাগাম, ঠারোঠোরে মানছেন সকলেই। কোনও পুরসভার দাবি, ক্যারিব্যাগ নিয়ন্ত্রণে ফের অভিযান শুরু হয়েছে। কোনও কোনও পুরসভা পরিস্থিতির ঘাড়ে দায় ঠেলে সমস্যা থেকে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ।
নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কম পুরু ক্যারিব্যাগ ব্যবহার না-করা নিয়ে আইন রয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং পুর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, সেই আইন কার্যকর করার। কিন্তু হুগলির বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তাঘাটে চোখ রাখলেই মালুম হয়, আইন স্রেফ ফাইলে বন্দি। আইন কার্যকরের দায় যাঁদের, তাঁরা কার্যত ঠুঁটো। বিষয়টি নিয়ে জেলার বিভিন্ন সংগঠন এবং পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই সরব।
উত্তরপাড়া পুরসভা এক সময় এই কাজে উঠেপড়ে লেগেছিল। ফলও মিলেছিল হাতেনাতে। নজরদারি বন্ধ হতেই পরিস্থিতি যে কে সেই হয়ে যায়। কয়েক মাস আগে ফের তারা এই ব্যাপারে পরিকল্পনা করে। বৈদ্যবাটী পুরসভাও এ নিয়ে রীতিমতো মাঠে নামে। ৫০ মাইক্রনের থেকে কম পুরু প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ বন্ধের আর্জি জানিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনুরোধ, লাগাতার প্রচার থেকে জরিমানা— নানা পদক্ষেপ করা হয়। পুরসভার এই প্রচেষ্টায় ওই ক্যারিব্যাগ বন্ধের প্রবণতা কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। চন্দননগর, চুঁচুড়া শহরেও এই বিষয়ে প্রচার চালানো হয়।
করোনার জেরে লকডাউন ঘোষণা হতেই যাবতীয় নজরদারি অবশ্য শিকেয় ওঠে। পাতলা ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। বিভিন্ন পুর-কর্তৃপক্ষ মানছেন, লকডাউনের সময় বিভিন্ন সংস্থার তরফে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে ত্রাণ বিলি করা হয়। স্কুলে মিড-ডে-মিলের খাদ্যসামগ্রী পর্যন্ত ক্যারিব্যাগেই দেওয়া হয়। এ সবের ফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যারিব্যাগ জমতে থাকে। বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ব্যাপারে রাশ টানা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষত শিক্ষিত সমাজের ভূমিকায় ব্যথিত পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য, শিক্ষিত মানুষজন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করলেই পরিস্থিতি অনেকটা শুধরে যেতে পারে। চন্দননগরের ‘পরিবেশ অ্যাকাডেমি’র কর্ণধার তথা পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমনিতেই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা অনেক পিছিয়ে। তার উপরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বেলাগাম ব্যবহারে দূষণ মারাত্মক ভাবে বেড়েছে। যেটুকু নিয়ন্ত্রণে এসেছিল, লকডাউনে তা-ও হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। আইনের কার্যকারিতা কার্যত শূন্যে নেমে এসেছে।’’
প্লাস্টিক-পলিথিনে আরামবাগ শহর ছয়লাপ। বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েক বার পুরসভা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। উল্টে, পুরসভার উৎসবেই প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে শহরের নিকাশি নালায় প্লাস্টিক জমছে। নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার এটি অন্যতম কারণ বলে পুর কর্তৃপক্ষ মানছেন। কালেভদ্রে প্রচার বা হাতেগোনা সভা বাদে শ্রীরামপুরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিয়ন্ত্রণে পুরসভার বিশেষ হেলদোল কোনও কালেই দেখা যায়নি। করোনা-কালে তা একেবারেই উবে গিয়েছে।
চাঁপদানি এবং ভদ্রেশ্বর পুরসভার সাফাই বিভাগের আধিকারিকদের সাফাই, লকডাউন পরিস্থিতিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। পরিস্থিতির চাপেই প্রচার অভিযান বন্ধ করতে হয়েছে। সমস্যার কথা স্বীকার করে চন্দননগরের পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু, চুঁচুড়ার পুর-প্রশাসক গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় ফের অভিযানের আশ্বাস দিয়েছেন।