উলুেবড়িয়ার বাণীতলার একটি এটিএমে। ছবি: সুব্রত জানা
করোনা-কালে সামলে রাখতে হবে হাত। কিন্তু এটিএমে তা কতটা সম্ভব! এটিএম কাউন্টারের যন্ত্রের কি-প্যাডে আঙুলের চাপ তো দিতেই হবে। দরজার হাতলে বা যন্ত্রের কি-প্যাডে লুকিয়ে থাকা ভাইরাস সংক্রমিত করছে না তো উপভোক্তাকে?
গ্রাহকদের একাংশের মনে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাঁদের অভিযোগ, ব্যাঙ্কে জীবাণুনাশক ছড়াতে কর্তৃপক্ষ তৎপর। কিন্তু এটিএমের দিকে তাঁদের নজর নেই। জীবাণুনাশক ছড়ানো দূরঅস্ত, নিয়মিত পরিস্কারও করা হয় না। এটিএম কাউন্টার যথাযথ ভাবে স্যানিটাইজ় করার দাবিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হয়েছে ‘অল বেঙ্গল সিটিজেন্স ফোরাম’ নামে একটি নাগরিক সংগঠন। এই মর্মে আবেদন জানানো হয়েছে হুগলির জেলাশাসকের দফতরেও।
ওই সংগঠনের সভাপতি শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক যে ভাবে সাফসুতরো রাখা হয়, এটিএম কাউন্টারগুলো হবে না কেন? এটিএমের দরজা ঠেলে ঢোকাই শুধু নয়, কি-প্যাডে আঙুলে চাপ দিয়েই কাজ করতে হয়। কোনও সংক্রমিত সেখানে গেলে তাঁর পরে যাঁরা যাবেন, তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। হয়তো হচ্ছেও। যে ভাবে স্যানিটাইজ় করলে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় থাকবে না, সেটা করা দরকার।’’
ওই দাবির যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করছেন বহু চিকিৎসক। হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী মনে বলেন, ‘‘এটিএমের দরজা হাত দিয়ে ঠেলে ঢোকা এবং যন্ত্রের কি-প্যাডে আঙুলের চাপ দেওয়ার ফলে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এই ব্যাপারে বিকল্প ভাবা দরকার।’’
বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ব্যাঙ্কের শাখা নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা খোলা থাকায় স্যানিটাইজ় করা সহজ। এটিএম চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকায় তা কঠিন। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্থানীয় পুরসভা বা ব্লক অফিস দিনে অন্তত দু’বার এটিএম স্যানিটাইজ় করার দায়িত্ব নিলে ভাল হয়। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা কিছুটা দূর হবে। সবচেয়েভাল গ্লাভস পরে নেওয়া অথবা কাউন্টারে ঢোকার আগে-পরে নিজের আঙুল ভাল করে স্যানিটাইজ় করা।’’
নিরন্তর প্রচারে লোকের মুখে মাস্ক উঠলেও গ্লাভসের ব্যবহার এখনও কম। ওই নাগরিক সংগঠনটির সদস্যদের দাবি, রাজ্য জুড়ে ১০ হাজারের উপরে এটিএম কাউন্টার আছে। হুগলিতে এই সংখ্যা তিনশোরও বেশি। বহু এটিএমে ঢুকলেই বোঝা যায়, নিয়মিত ঝাড়পোঁচ পর্যন্ত হয় না। চতুর্দিকে কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নোংরা হয়ে থাকে। বিভিন্ন জেলা থেকেই এই ব্যাপারে তাঁরা অভিযোগ পাচ্ছেন। শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এ রাজ্যের চিফ জেনারেল ম্যানেজারকে ই-মেলের মাধ্যমে পাঠানো আবেদনপত্রে এটিএম স্যানিটাইজ় করার দাবি করা হয়েছে। চিঠির প্রতিলিপি ই-মেলে পাঠানো হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকেও।
অনেকেই মনে করছেন, বিকল্প না ভাবলে এ ক্ষেত্রে অর্থই হবে অনর্থের মূল।