লেন ভেঙে অবাধ গাড়ি চলাচল উলুবেড়িয়ায় অথচ চোখ বুজে প্রাশাসন। ছবি: সুব্রত জানা
ছয় নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটছে ঝাড়গ্রামের উদ্দেশে। কোলাঘাট ছাড়ানোর কিছু পরে সিভিক ভলান্টিয়াররা পথ আটকালেন। চালক লাইসেন্স নিয়ে নামলেন, গাড়ির কাগজ নিয়ে আমি।
বড়সড় লাইন ‘সাইড-করানো’ গাড়ির। চালকেরা দুই পুলিশ অফিসারকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জানা গেল, গতি আশি কিলোমিটারের উপর হলেই লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে।
শোরগোল পড়ে গেল। এই গতিসীমা আবার কবে হল? কেউ তো শোনেনি। কোথাও লেখাও নেই। না জানিয়ে জরিমানা কেন? জবাব এল, ‘সেটা আদালতে বুঝে নেবেন।’ গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় গতিসীমা আশি কিলোমিটার। কোলাঘাটে নাকি বোর্ড আছে।
কেন এই জরুরি কথাটা একটাই বোর্ডে লেখা থাকবে, সে প্রশ্ন আর কেউ তুললেন না। লাইসেন্স না কেড়ে জরিমানার আবেদন করলেন। মঞ্জুর হল। বারোশো টাকায় শুরু করে চারশোয় নামল অঙ্ক। জরিমানার কাগজ নিয়ে যেতে হল পাশে কম্পিউটার-চালকের কাছে। তিনি পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে ফেরত দিলেন পঞ্চাশ টাকা। আর পঞ্চাশ? ‘অনলাইন ফি,’ জানালেন তিনি। রসিদ কিন্তু চারশো টাকার। পাঁশকুড়া থানার অফিসার নিরাপদ দলুই তা দেখে লাইসেন্স ফেরত দিলেন।
বাকি রাস্তায় চোখ চেয়ে রইলাম চারজন। শৌচের পর হাত ধোও, গাছ লাগাও, শহর সুন্দর রাখো, কত আবেদন চোখে পড়ল। কিন্তু আশি কিলোমিটারের বিজ্ঞপ্তি তো চোখে প়ড়ল না। টোল প্লাজাতে না। ডিভাইডারের বোর্ডেও না। সড়ক-ধারের হোর্ডিং-এ না। এ দিকে তথ্য বলছে, জাতীয় সড়কে গতির সীমা একশো কিলোমিটার।
প্রশ্ন, তবে কি জাতীয় সড়কে নানা জেলায় নানা গতিসীমা? যদি তাই হয়, জানার উপায় কী? ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ বিজ্ঞাপনে কি জেলার গতিসীমা লেখা যেত না? নিয়ম মানানো পুলিশের কাজ, না বোকা বানানো?
পরদিন প্রত্যাবর্তন। আশির বেশি উঠতেই দিলাম না গতির কাঁটা। পাশ দিয়ে যে গাড়িগুলো সাঁ সাঁ করে চলে গেল, তারা একশোর কত উপরে, সেই তর্ক চলল নবান্ন অবধি।