দায়সারা: এলাকায় এভাবেই ছড়ানো হয়েছে ব্লিচিং পাউডার। নিজস্ব চিত্র
নিকাশি নালা ভর্তি প্লাস্টিকে। নালার জল উঠে এসেছে রাস্তায়। নালার জল যে পুকুরে পড়ার কথা সেটাও আবর্জনায় ভর্তি। চারদিকে মশা ভনভন করছে। আর দুর্গন্ধ।
ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালের উল্টো দিকে ফোকোর দোকানের সামনেই হাল ঠিক এমনই। কে বলবে, রবিবার রাতে এই পাড়ারই অশোক ঘোষ নামে এক বাসিন্দা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, হাওড়ায় চলতি বছরে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম। অথচ এলাকার বেহাল ছবিটা রয়েছে গিয়েছে একই। তবে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, নিকাশি নালা এবং কয়েকটি এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানো হয়েছে। পাড়ায় আর কারও জ্বর হয়েছে কি না সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘গতবারের থেকে এ বার জেলায় ডেঙ্গির প্রকোপ কম। যেহেতু একজনের ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে, তাই আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।’’
গত ১৫ দিন ধরে ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতাল সংলগ্ন ফোকোর দোকান, ডাকঘর, উত্তরপাড়ায় জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেরই ডেঙ্গি হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর তা প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পাল্টা দাবি, যাঁরা জ্বরে পড়েছেন তাঁদের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে অশোকবাবুর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হওয়ায় স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসে।
সোমবার দুপুর থেকেই এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানো, জ্বরে আক্রান্তদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়। মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে জানা গেল, স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল এলাকায় মশা মারার তেল ছড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু মশা মারার তেল কেনার বরাদ্দ তাদের ছিল না। ফলে এগিয়ে আসতে হয়েছে পুলিশকে। পোড়া মোবিল এবং কেরোসিন তেল পুলিশ দায়িত্ব নিয়ে ছড়িয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মশা মারার ধোঁয়া ছাড়ার কামান একটা আনা হয়েছিল বটে। কিন্তু তা চলেনি। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের যুক্তি, গ্রামীণ এলাকার কাউকেই এই কামান চালানো শেখানো হয়নি। তবে এত সহজে হাল ছাড়তে চায়নি স্বাস্থ্য দফতর। একজনকে দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাই আর ধোঁয়া ছড়ানো যায়নি।
ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোতে স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী হলেও তার সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। ডেঙ্গিতে মৃত অশোকবাবুর ছেলে অনিকেতের কথায়, ‘‘নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করা না হলে সেখানে তো জল জমেই থাকবে। মশার আঁতুড়ঘর তো জমা জলই।’’ এই পাড়ার ভিতর দিয়ে যে নালা গিয়েছে তার জল গিয়ে পড়ে একটি বড় পুকুরে। আলাদা একটি নালার মাধ্যমে গ্রামীণ হাসপাতালের নোংরা জলও সেই পুকুরেই পড়ে। কিন্তু বর্জ্যে পুকুরটি বুজে গিয়েছে। ফলে নিকাশি নালা দিয়ে জল যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা ছবিরানি ঘোষ, কমলেশ্বর হালদারদের ক্ষোভ, ‘‘পুকুর সাফ না করলে নিকাশি নালায় জল জমে থাকবে। মশার উৎপাতও কমবে না।’’
এখানেই শেষ নয়। ডোমজুড় গ্রামীণ হাসপাতালের সামনের নালাটিও নোংরা জলে ভর্তি। ওই নালা পরিষ্কারের দায়িত্ব স্বাস্থ্য দফতরের। কিন্তু নালার উপরে শুধু ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় সেরেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, ‘‘নালার উপরে জবরদখলকারীরা ব্যবসা করছেন। নালা পরিষ্কারে গেলে বাধা দেন তাঁরাই।’’