পিচ না পড়ায় উড়ছে ধুলো। — নিজস্ব চিত্র
দৃশ্য ১— রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন কয়েকজন যাত্রী। হঠাৎই তাঁদের সামনে বড়দা এলাকার কাছে ডিহিভুরসুট-হাওড়া রুটের একটি বাস এসে যায়। পথচারীদের তো নাজেহাল অবস্থা। কেউ মুখে রুমাল চাপা দিলেন। আবার কেউ পিছন ফিরে ঘুরে দাঁড়ালেন।
দৃশ্য ২— প্রায় একই অবস্থা হল এক মোটরবাইক আরোহীরও। তিনি নিজের চোখ-মুখ সামলাবেন না বাইক চালাবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। প্রায় পড়ে যায় যায় অবস্থা। বাসটি চলে যাওয়ার পরে গজ গজ করতে করতে গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা হলেন সকলেই।
সৌজন্য ধুলোময় রাস্তা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এই অবস্থা শুধু তাঁদের দু’এক দিনের নয়। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলছে। কারণ, ডিহিভুরসুট-সেহাগড়ি রুটের কাজ সেখানে চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাজ ঢিমে তালে চলার ফলেই গোটা রাস্তা ধুলোয় ভরা। বড় বা ভারী কোনও যানবাহন গেলেই ধুলো উড়তে শুরু করে। চোখে কিছু দেখা যায় না। রাতের বেলায় তো আরও সমস্যা হয়। পথচারীদের দাবি, রাস্তার কাজ হচ্ছে ভাল কথা। কিন্তু কাজ করার সময় রাস্তায় ঠিকমতো জল না দেওয়ায় বেশি ধুলো হচ্ছে।
এ তো গেল পথচারীদের কথা। কী বলছেন বাসযাত্রীরা? বাসযাত্রীরা জানালেন, বাসের ঝাঁকুনি সামলাতে সামলাতে তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।
রাস্তার কাজ ঢিমেতালে চলছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন পূর্ত দফতরের (সড়ক) কর্তারা। কিন্তু ধীর গতিতে কাজ কেন চলছে? রাস্তার কাজ শেষের সময়সীমা ইতিমধ্যে বছর খানেকের বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও রাজাপুর থেকে সেহাগড়ি পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার পথের কাজ অনেকটাই বাকি রয়েছে বলে পূর্ত সড়ক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তাদের দাবি, বন্যার জন্য কাজ অনেকবার ব্যাহত হয়েছে। তবে রাস্তায় ঠিকমতো জল না দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পূর্তদফতর।
সেহাগড়ি থেকে ডিহিভুরসুট পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার রাস্তাটির কাজ চলছে চার বছর ধরে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি বেহাল ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পরেই নতুন সরকার আমলে রাস্তাটি সংস্কারে উদ্যোগী হয়। ২০১২-১৩ সাল নাগাদ রাস্তার কাজ শুরু হয়। ২০১৫ নাগাদ কাজ শেষ করার কথা ছিল। দেখা গেল, রাজাপুর থেকে সেহাগড়ি পর্যন্ত রাস্তায় প্রথম পর্যায়ে বড় স্টোনচিপ পাতা ও তার উপর ছোট স্টোনচিপ পাতার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পিচের আস্তারণ দেওয়ার কাজ এখনও বাকি। গোটা রাস্তা ধুলোয় ভর্তি। বহু জায়গায় রাস্তায় ছোট স্টোনচিপ আবার উঠে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। এখনও কাজ শেষ না হওয়ায় পথচারী ও নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তির শেষ হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রুটে বাস, অটো, ট্রেকার চলাচল করে। মানুষজন আমতা, উলুবেড়িয়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। উদয়নারায়ণপুরেও বহু লোক নানা কাজে আসেন। বড়দা এলাকার এক বাসিন্দা শিশির মাইতি বলেন, ‘‘এ ভাবে যাতায়াত করতে করতে কাশি হয়ে গিয়েছে।’’ এক স্কুল শিক্ষিকা ও এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, ‘‘কবে যে কাজ শেষ হবে জানি না। দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ হোক।’’ কবে কাজ শেষ হবে তার কোনও সদুত্তর মেলেনি পূর্ত দফতর (সড়ক)-এর কাছ থেকে।