বাবা নেই, ফোঁটা দিতে যাওয়া হল না রিয়ার

প্রতিবার বর্ধমানে এক তুতো দাদাকে ফোঁটা দিতে যেতেন আরামবাগ কালীপুর নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিয়া। ফিরতেন বাবার সঙ্গে। রবিবার সকালেও তাঁর সঙ্গে বাবার কথা হয়েছে। দাদাকে ফোঁটা দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বাবার সঙ্গে তাঁর আরামবাগে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার সকালে এল বাবার মৃত্যুসংবাদ।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩০
Share:

মৃত: বিশ্বজিৎ সামুই

আর ভাইফোঁটা দিতে যাওয়া হল না রিয়ার। কার সঙ্গে ফিরবেন? বাবা-ই যে নেই।

Advertisement

আরামবাগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সার্কাস মাঠ এলাকার বাসিন্দা রিয়া সামুই পুলিশকর্মী বিশ্বজিৎ সামুইয়ের একমাত্র মেয়ে। রবিবার গভীর রাতে মেমারির পালসিট উড়ালপুলের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বিশ্বজিৎ। আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁর পরিবারে।

প্রতিবার বর্ধমানে এক তুতো দাদাকে ফোঁটা দিতে যেতেন আরামবাগ কালীপুর নেতাজি মহাবিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিয়া। ফিরতেন বাবার সঙ্গে। রবিবার সকালেও তাঁর সঙ্গে বাবার কথা হয়েছে। দাদাকে ফোঁটা দিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বাবার সঙ্গে তাঁর আরামবাগে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার সকালে এল বাবার মৃত্যুসংবাদ। রিয়া বলেন, ‘‘বাবা বলেছিল, তোকে নিয়ে বাড়ি ফিরব। কিন্তু বাবা আর নেই।’’

Advertisement

বিশ্বজিতের পৈতৃক বাড়ি গোঘাটের শ্যামবাটী গ্রামে। বছর সাতেক হল মেয়ের পড়াশোনার সুবিধার জন্য আরামবাগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সার্কাস মাঠের কাছে বাড়ি করেন। শ্যামবাটী গ্রামে তাঁর বাবা-মা এবং ভাই থাকেন। গ্রামেও তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছয় এ দিন সকালে। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাবা বছর চুয়াত্তরের শৈলেনবাবু নিথর বসে আছেন উঠোনে। চোখ দিয়ে অবিরাম জল গড়াচ্ছে। মা ভারতীদেবী স্বামীর কোলে মাথা রেখে কেঁদে চলেছেন। জড়ো হয়েছেন প্রতিবেশীরা। শৈলেনবাবু বললেন, “ছেলে প্রতি মাসে বাড়িতে এসে এক-দু’দিন থাকত। এই বয়সে ছেলের মৃত্যুর খবর সহ্য করা যাচ্ছে না।” সন্ধ্যায় বিশ্বজিতের মৃতদেহ আরামবাগ হয়ে গ্রামে নিয়ে যান তাঁর ভাই সঞ্জীব। গ্রামের শ্মশানেই দাদাকে দাহ করা হবে বলে জানান তিনি।

একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আরামাবগেরই উত্তর রসুলপুরের প্রবীরকুমার হাটি। তবে, বর্ধমান পুলিশ লাইনে কাজের সুবিধার জন্য প্রবীরবাবু বাড়ি ভাড়া নিয়ে সপরিবারে বর্ধমানেই থাকতেন। মাসতিনেক আগে তিনি এক কন্যাসন্তান দত্তক নেন। গ্রামের বাড়িতে তাঁর দাদা অসিতবাবু এবং মা মিনতিদেবী থাকেন। মাঝেমধ্যে সেখানে আসতেন। অসিতবাবুরাও এ দিন সকালে প্রবীরের মৃত্যুর খবর পান। প্রবীরের মৃতদেহও গ্রামে আনা হয় সন্ধ্যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement