আরামবাগ-বর্ধমান রোড অবরোধ গ্রামবাসীরা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।
ঝুপড়ির উঠোনে খেলা করছিল দু’বছরের শিশু। একটু তফাতে রান্না করছিলেন মা। আচমকাই পথের ধারের মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ল শিশুটির গায়ে। মৃত্যু হল তার। ডাল ছিটকে আহত হলেন মা। শনিবার দুপুরে আরামবাগের নৈসরাইতে এই দুর্ঘটনায় মরা গাছের ডাল কাটা নিয়ে পূর্ত দফতরের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তুলে সংলগ্ন আরামবাগ-বর্ধমান রোড প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। মৃতের নাম কার্তিক সর্দার।
শিশুমৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে মহকুমা পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার (নির্মাণ-১) অলোক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উদাসীনতার প্রশ্ন নেই। মরা গাছগুলি চিহ্নিত করে বন দফতরের অনুমতি নিয়ে দফায় দফায় কাটার কাজ চলছে। সম্প্রতি এমন ৮টি গাছ কাটা হয়েছে। রবিবার থেকে ফের মরা গাছ কাটা শুরু হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৪০টি গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলি দ্রুত কাটার জন্য বন দফতরের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সড়কের ধারেই নৈসরাই বাজারের পাশে কার্তিকদের ঝুপড়ি। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনার পরেই আশপাশের লোকেরা এসে মা-সন্তান দু’জনকেই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। কার্তিককে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। মা বুলবুলি সর্দারকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ওই রাস্তার দু’দিকে পূর্ত দফতরের জমিতে সমস্ত মরা গাছ কেটে সরিয়ে নেওয়া এবং মৃত শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে দুপুর ২টো নাগাদ অবরোধ শুরু হয়। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের ভাঙা ডাল ফেলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন অবরোধকারীরা। আরামবাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে গ্রামবাসীরা দাবি জানান, পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের আসতে হবে। আইসি পার্থসারথি হালদার এসে পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলে আজ, রবিবার থেকে গাছ কাটার আশ্বাস দিলে বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ অবরোধ ওঠে। ক্ষতিপূরণের দাবি প্রশাসনের তরফে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়।
ওই রাজ্য সড়কের হুগলির অংশে আরামবাগ থেকে নৈসারই পর্যন্ত অনেক প্রাচীন গাছ মরে শুকিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। অবরোধকারীদের মধ্যে মির চঞ্চল, শুভঙ্কর নিয়োগী প্রমুখের অভিযোগ, ‘‘মরা গাছের শুকনো ডাল ভেঙে প্রায়ই ঝুপড়ির চাল ভাঙছে, গুমটি দোকানের ক্ষতি হচ্ছে। পথচারী, মোটরবাইক আরোহী জখম হচ্ছেন। বাস-লরির উপরে ডাল ভেঙে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।’’
বন দফতরের আরামবাগের চাঁদুর রেঞ্জার রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পূর্ত দফতরের আবেদনের ভিত্তিতে গাছ কাটার ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমতির ব্যবস্থা করা হয়েছে।