মৃত সুচাঁদ জানার (ইনসেটে) শোকাহত পরিবার। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
এক যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার উত্তেজনা ছড়াল খানাকুলের কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েত এলাকায়। সুচাঁদ জানা (৩৫) নামে ওই যুবকের দেহটি মেলে কুলাট সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধের ধারে। তাঁর কপাল ও গালে ক্ষতচিহ্ন ছিল। ওই যুবককে দলীয় কর্মী দাবি করে বিজেপির বিরুদ্ধে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ তোলে তৃণমূল। বিজেপি অভিযোগ নস্যাৎ করেছে।
সুচাঁদের বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে ইছাপুর গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃতের ভাই অনুপ অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিনই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে দেহটির ময়নাতদন্ত হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নাতদন্তে মৃতের পাকস্থলিতে প্রচুর মদ মিলেছে। মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছিল। গাল এবং কপালের ক্ষত হালকা। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে দেহাংশের নমুনা ভিসেরা পরীক্ষায় পাঠানো হচ্ছে।
অনুপ বলেন, ‘‘দাদা তৃণমূল সমর্থক ছিলেন। কিন্তু তাঁর মতো সাধারণ সমর্থকের কেউ শত্রু আছে বলে কোনও দিন শুনিনি। দাদার মৃতদেহ দেখে পিটিয়ে মারা হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। কারা খুন করেছে, পুলিশ দেখুক।”
পুলিশ ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুচাঁদ টোটো চালাতেন। বছর দেড়েক আগে তাঁর স্ত্রী মারা যান। পৈতৃক বাড়ির পাশেই বাড়ি করেছিলেন। বাবা-মা তাঁকে দু’বেলা খাবার পাঠাতেন। সুচাঁদের বাবা বামাপদবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৮টা নাগাদ তিনি ছেলের ঘরে খাবার দিয়ে চলে আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে ছেলেকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, খাবার ঢাকা দেওয়া পড়ে রয়েছে। ছেলে নেই। তারপরেই ছেলের দেহ উদ্ধারের খবর পান তিনি।
এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিদিন রাতে কুলাটের মালপাড়ায় চোলাই মদের ঠেকে আসতেন সুচাঁদ। মদ খেয়ে বাঁধ ধরেই বাড়ি ফিরতেন। অনেকে মনে করছেন, মদের আসরের সঙ্গীদের সঙ্গে কোনও ঝামেলার কারণে সুচাঁদ খুন হতে পারেন বা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনাতেও তাঁর মৃত্যু হতে পারে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সরাসরি বিজেপির দিকেই খুনের অভিযোগ তুলেছেন। বিকেলে জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব ইছাপুরে এসে মৃতের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। দিলীপ অবশ্য বিজেপির নাম নেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। আমাদেরও দাবি, দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর সাজার ব্যবস্থা করুক পুলিশ। মৃতের পরিবারের পাশে আমাদের দল আছে।”
অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষের দাবি, “অস্বাভাবিক মৃত্যটিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল নোংরা রাজনীতির চেষ্টা করছে। তাতেই আমাদের আপত্তি রয়েছে। ওই যুবক খুন হয়ে থাকলে আমরাও চাই দোষীদের পুলিশ ধরুক। কঠোর সাজা হোক।”