তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
দলের নেতাদের তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই সরকারি প্রকল্পের ‘কাটমানি’ ফেরতের দাবিতে বুধবার ধনেখালি বিধানসভার দাদপুরে এক তৃণমূল নেতার বাড়িতে হামলা হল।
পশ্চিম শিকটা গ্রামে তৃণমূলের বুথ সভাপতি গোপাল অধিকারীর বাড়িতে এ দিন বিকেলে চড়াও হয় একদল লোক। তাঁর বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। জানলার কাচ ভেঙে দেওয়া হয়। কেরোসিন ঢেলে বাড়িতে আগুন লাগানোরও চেষ্টা হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনায় বিজেপির দিকে অভিযোগের আঙুল উঠেছে।
বিজেপি নেতা আশিস হালদার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ওই নেতার বাড়িতে আমাদের দলের কেউ যাননি। সাধারণ গ্রামবাসী গিয়েছিলেন। উনি ১০০ দিনের কাজের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা কার পকটে ঢুকেছে, সেই জবাব ওঁকে দিতে হবে। লোকসভা নির্বাচনে আগে এলাকায় মানুষকে উনি হুমকি দিয়েছিলেন। মহিলারাও হুমকি থেকে বাদ যাননি।’’
গোপালবাবু অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘কোনও দুর্নীতি হয়নি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বিজেপির লোকেরা মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমরা সাধারণ গ্রামবাসীর পাশেই আছি।’’
বিভিন্ন কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দিন বিকেলে দাদপুরের মাকালপুর পঞ্চায়েতে বিজেপির তরফে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ তোলেন, বহু গরিব মানুষকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে কাজ দেওয়া হয়নি। অল্প দিনের মধ্যেই কংক্রিটের রাস্তা বেহাল হয়ে পড়েছে। গরিব মানুষের জন্য সরকারি বাড়ি তৈরি প্রকল্পেও ‘কাটমানি’ খাওয়া হয়েছে। সেই টাকা ফেরতের দাবি জানানো হয়।
ওই পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের সব ক’টিই শাসক দলের দখলে রয়েছে। লোকসভা ভোটে অবশ্য এখানে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। আটটি আসনে তারা এগিয়ে গিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, বিরোধী না-থাকায় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে টাকা নয়ছয় করে তৃণমূলের নেতা তথা পঞ্চায়েতের সদস্যেরা ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। বিজেপি নেতা আশিসবাবু বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করতে পাঁচ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত তোলা নিয়েছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা করায় কিছু দিনের মধ্যেই বেহাল হয়ে পড়েছে। ওদের নেতারা লুটেপুটে খেয়েছেন। দুর্নীতি নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হল। ব্যবস্থা না-নিলে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।’’
পঞ্চায়েত প্রধান অঞ্জন সিংহরায়ের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘আমাদের দলের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হলে যে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে কথা তো মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন। যে বিজেপি রাফালের কোটি কোটি টাকা চুরি করেছে, তাদের কাছে আমাদের স্বচ্ছতার পাঠ নিতে হবে না।’’