লকডাউন নিয়ে প্রচারে পুলিশ। উলুবেড়িয়া শহরে। —ফাইল চিত্র
পরিসংখ্যানটা চমকে দেওয়ার মতোই!
গত এক সপ্তাহে গোটা হাওড়া জেলাতেই সংক্রমণের হার কমেছে। জেলায় দৈনিক করোনা সংক্রমণের হার গড়ে দু’শোর মতো। জেলারই একপ্রান্তে উলুবেড়িয়া পুর এলাকায় সেই হার এখন নামমাত্র!
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত ১১ অগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহে উলুবেড়িয়া পুর এলাকায় সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ১৩ জন। অর্থাৎ, দৈনিক গড় সংক্রমণের হার দু’য়েরও কম। তার মধ্যে তিন দিন সংক্রমণ ছিল শূন্য।
সংক্রমণ দ্বিগুণ হওয়ার দিনের ফারাকও ক্রমশ বাড়ছে। গত ১৪ জুলাই পুর এলাকায় প্রথম পর্যায়ের আংশিক লকডাউন হয়। তারপরে ফের তা ১৪ দিনের জন্য বাড়ানো হয়। প্রথম পর্যায়ের আংশিক লকডাউনের আগে সংক্রমণ দ্বিগুণ হওয়ার মধ্যে সাত দিনের ফারাক ছিল। বর্তমানে সংক্রমিতের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে ২০ দিনে।
১১ অগস্ট পর্যন্ত উলুবেড়িয়া পুর এলাকায় মোট সংক্রমিত ১৯০ জন। তার মধ্যে অ্যাক্টিভ পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যা মাত্র ৩০ জন। সব মিলিয়ে সংক্রমণ কমছে দেখে হাঁফ ছেড়েছেন পুরকর্তারা। শহরের কোথাও কোনও গণ্ডিবদ্ধ এলাকা (কন্টেনমেন্ট জ়োন) নেই। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আংশিক লকডাউন আর জারি না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তা কার্যকর হচ্ছে। পুর-প্রশাসক অভয় দাস বলেন, ‘‘প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করেই পরীক্ষামূলক ভাবে আংশিক লকডাউন আর না-করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক সপ্তাহ পরে পরিস্থিতি ফের খতিয়ে দেখা হবে। যদি দেখা যায় সংক্রমণ বাড়ছে, তা হলে ফের আংশিক লকডাউন করা হবে।’’
উলুবেড়িয়া পুরসভার সাফল্যকে উল্লেখযোগ্য বলেই মনে করছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, আংশিক ও পুরো সময়ের লকডাউন আক্ষরিক অর্থে কার্যকর করে পুর কর্তৃপক্ষ সংক্রমণের চেন ভাঙতে পেরেছেন। তবে, একইসঙ্গে তাঁরা মনে করছেন, সংক্রমণ কমাতে আংশিক লকডাউন সত্যিকারের কতটা কাজে লেগেছে, তা বোঝা যাবে এর পরে। যখন আংশিক লকডাউন থাকছে না।
জেলার বাকি অংশে সংক্রমণ কেমন?
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, গত ৫ অগস্ট থেকে ১১ অগস্ট পর্যন্ত জেলা জুড়ে গড় দৈনিক সংক্রমণের হার দু’শো ছুঁয়েছে। ৯ অগস্ট থেকে নতুন করে গণ্ডিবদ্ধ এলাকার সংখ্যা ৮০ থেকে বাড়িয়ে ৯২ করা হয়েছে। কোথাও কোথাও সংক্রমণ লাগামছাড়া হওয়ায় নতুন করে সেই এলাকায় নিয়ন্ত্রণ জারি করতে হয়েছে। যেমন, আমতা-১ ব্লকে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এই ব্লকের আনুলিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় লকডাউন ছিল। বুধবার থেকে পুরো ব্লকেই আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
তবে, ৫ অগস্ট সংক্রমিত হয়েছিলেন ২৯৩ জন। পরের দিনগুলিতে তত কেউ সংক্রমিত হননি। সংক্রমণের এই হারকে অবশ্য স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের দাবি, দিনপনেরো হল জেলায় শুরু হয়েছে ‘র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা’। আগে শুধু উপসর্গ আছে, এমন লোকজনেরই লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এখন উপসর্গহীনদের মধ্যে ‘র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা’ করা হচ্ছে। তাতে অনেক সংক্রমিতের কথা জানা যাচ্ছে। ফলে, মোট সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে।
এই এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। গড়ে দৈনিক ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থতার হারও অবশ্য বেড়েছে। দৈনিক গড়ে ৩০০ জন করে সুস্থ হচ্ছেন।