প্রতীকী ছবি
কেউ ভুগছেন ক্যানসারে, কেউ হৃদ্রোগে।
কেউ হয়তো কিডনির রোগে আক্রান্ত, কারও বা যকৃতের সমস্যা।
লকডাউনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হল। দুই জেলায় বহু কঠিন রোগে আক্রান্তদের দুর্ভোগ মিটল না। বরং তা আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হল। কারণ, লকডাউন ঘোষণার পর চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত ‘চেম্বার’ সেই যে বন্ধ হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনও খোলার নাম নেই।
চুঁচুড়ার মিলিটারি কলোনির প্রদীপ সেনগুপ্তের ছেলে ক্যানসার রোগী। করোনার কারণে কলকাতা থেকে কেমোথেরাপির ওষুধ আনানো বা স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে যাওয়া— পদে পদে বাধা পাচ্ছেন প্রদীপবাবু। এক মাস ধরে নানা টানাপড়েনে তিনি ক্লান্ত। ব্যান্ডেলের এক হৃদ্রোগীরও একই সমস্যা। ডাক্তার দেখাতে পারছেন না। রীতিমতো উদ্বেগে রয়েছেন তিনি। উত্তরপাড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর হয়ে আরামবাগ— রোগীদের দুর্ভোগ কমবেশি একই। হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনানের মতো গ্রামীণ এলাকাতেও একই পরিস্থিতি। এমনকি, বাগনান-২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও রোগীদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার গত মাসে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই চিকিৎসকেরা রোগী দেখা কার্যত ছেড়েছেন। মিলছে শুধু পরামর্শ। ফোনে বা হোয়াটস্অ্যাপে। এর পিছনে অবশ্য চিকিৎসকদের নিজস্ব যুক্তিও রয়েছে। তাঁদের দাবি, রোগীদের নিরাপত্তার কারণের তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। উত্তরপাড়ার চিকিৎসক ঐশ্বর্যদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আসলে রোগী দেখার ক্ষেত্রে এখন দূরত্ব বজায় রাখাটা বিশেষ সমস্যার হচ্ছে। কোনও চিকিৎসকের চেম্বারেই বেশি পরিসর নেই। তাই মূলত ফোনে বা হোয়াটস্অ্যাপে চিকিৎসা করা হচ্ছে। বিশেষ প্রয়োজনে অবশ্য আমরা রোগী দেখছি।’’
আরামবাগ শহরে সব মিলিয়ে ১১০ জন চিকিৎসকের ‘চেম্বার’ চলে। বাইরে থেকে আসা-যাওয়া করেন, এমন জনা ৩০ চিকিৎসকের ‘চেম্বার’ বন্ধ থাকলেও বাকিদের খোলা! অবশ্য, সে সব চেম্বারে শুধু শিশুদের পেটের রোগ, প্রসূতি এবং ডায়াবিটিসের রোগীদেরই শুধু দেখা হচ্ছে। কারও জ্বর হয়েছে বা কেউ অন্য কোনও কঠিন রোগে আক্রান্ত শুনলেই ফিরিয়ে দেওযা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
চিকিৎসকদের একাংশ অবশ্য পরিষেবা জারি রেখেছেন। তাঁরা ‘চেম্বার’ খুলছেন। চুঁচুড়ার চিকিৎসক অনির্বাণ বসু নিজের ব্যক্তিগত পরিচিতি কাজে লাগিয়ে অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর শ্রীরামপুর শাখার তরফে শহরের সংগঠনভুক্ত সব চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তাঁরা যাতে অন্য সময়ের মতোই নির্দিষ্ট সময়ে চেম্বারে বসেন এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ সুরক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করে রোগী দেখেন।
আইএমএ-র শ্রীরামপুর শাখার সভাপতি, চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস বলেন, ‘‘সংগঠনের হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে এ সংক্রান্ত আবেদন জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত ভাবেও হোয়াটস্অ্যাপ পাঠানো হয়েছে। আইএমএ-র কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য শাখাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’
গ্রামীণ হাওড়াতেও খোলা চেম্বারের সংখ্যাটা হাতেগোনা। বাগনান এবং উলুবেড়িয়ার চিকিৎসকেরা শুধুমাত্র ফোনে পরামর্শ দিচ্ছেন রোগীদের।