প্রতিবাদ: মজুরির দাবিতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিলের সামনে। ছবি: সুশান্ত সরকার
লকডাউনে চালু করার (২০ এপ্রিল থেকে) ছাড়পত্র পেয়েছে পাটশিল্প। বুধবারই রাজ্যের সব জুটমিল খোলার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাবতীয় সুরক্ষা বিধি মেনে এক দিন অন্তর ১৫% করে শ্রমিককে কাজে লাগিয়ে জুটমিলগুলি চালাতে বলেছেন তিনি। কিন্তু ওই পদ্ধতিতে উৎপাদন চালানো কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন জুটমিল-মালিক এবং শ্রমিক নেতাদের একাংশ। এ জন্য শ্রমিক-বিক্ষোভেরও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
হাওড়ায় ১৪টি জুটমিল রয়েছে। হুগলিতে ১০টি। এর মধ্যে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া এবং শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিল প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ। দুই জেলা মিলিয়ে জুটমিল শ্রমিকের সংখ্যা লক্ষাধিক। কেন্দ্র এবং রাজ্যের নির্দেশ সত্ত্বেও জুটমিলগুলি লকডাউন-পর্বের টাকা না দেওয়ায় শ্রমিকেরা দুর্দশায় পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী জুটমিল খুলতে বললেও শ্রমিকদের মধ্যে কোনও উচ্ছ্বাস নেই। তাঁদের দাবি, জুটমিলে নানা বিভাগ আছে। মাত্র ১৫% শ্রমিক নিয়ে সব বিভাগ চালানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে একজন শ্রমিক সপ্তাহে একদিনও কাজ পাবেন কিনা সন্দেহ। কাজ না-পেলে বাকি শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করতে পারেন।
এআইইউটিইউসি অনুমোদিত বেঙ্গল জুটমিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন-এর রাজ্য সভাপতি দিলীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘১৫% শতাংশ শ্রমিক নিয়ে জুটমিলে উৎপাদন চালানো সম্ভব? আগে শ্রমিকদের লকডাউন পর্বের টাকা মেটানো হোক। তার পরে মিল খোলা নিয়ে সমস্ত শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। শ্রমিকদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা সরকারকেই দিতে হবে।’’ একই দাবি তুলে সিপিআইয়ের হুগলি জেলা সম্পাদক তিমিরবরণ ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘শ্রমিকদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা সরকারকেই দিতে হবে। তবে, সবচেয়ে বড় কথা, যে ভাবে মিল চালাতে বলা হচ্ছে, সেটা কি
আদৌ সম্ভব?’’
একই প্রশ্ন তুলেছেন ভদ্রেশ্বরের নর্থ শ্যামনগর জুটমিলের শ্রমিক রাজেশ সাউ, বাঁশবেড়িয়ার গ্যাঞ্জেস জুটমিলের শ্রমিক গৌরীশঙ্কর সাউ, শুভেন্দু সরকার, সমীরকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতো অনেকে। সূত্রের খবর, আগামী ২১ এপ্রিল থেকে হাওড়ায় জুটমিলগুলি খুলতে মালিকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এই জেলার বিভিন্ন জুটমিলের শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে দ্রুত চটকল খোলার রূপরেখা তৈরির জন্য মালিকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, এই ভাবে কাজ চালানো সম্ভব নয়। তৃণমূলের হুগলির শ্রমিক নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে শ্রমিকদের এবং শিল্পের ভালই হবে।’’
প্রশ্ন অবশ্য আরও রয়েছে। লকডাউন পর্বের টাকা শ্রমিকেরা আদৌ পাবেন কিনা? ১৫% হিসেবে পর্যায়ক্রমে কোনও শ্রমিক সপ্তাহে একদিন কাজ পেলে তিনি কি শুধু এক দিনের মজুরি পাবেন নাকি পুরো বেতন? হুগলির বন্ধ দুই জুটমিল কি বন্ধই থাকবে? শ্রম দফতরের আধিকারিকদের কাছে এই সব প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
হুগলির শ্রম দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, শ্রমিকদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা করা কঠিন হবে না। শ্রমিকেরা জুটমিলের কাছাকাছি থাকেন। ফলে, গাড়ি না চললেও তাঁদের যাতায়াতে সমস্যা হবে না। চন্দননগরের উপ শ্রম-কমিশনার কিংশুক সরকার এবং শ্রীরামপুরের উপ শ্রম-কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী জানান, চটকল খোলার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের তরফে দিন কয়েক ধরে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা চলছিলই। এই বিষয়ে শ্রম দফতর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রাখছে। জেলার এক শ্রমকর্তা বলেন, ‘‘লকডাউন-পর্বের মজুরি নিয়ে চটকল-মালিকদের সঙ্গে কথা চলছে।’’