Coronavirus

অভুক্তদের পেট ভরাতে ত্রাণ বিলি বাবা-ছেলের

হাওড়া পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত, আড়ুপাড়ার সুভাষনগরে উন্নয়ন এখনও সে ভাবে পৌঁছয়নি। আড়ুপাড়া আর পাশের শিল্প এলাকা কামারডাঙার মাঝে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া খড়্গপুর শাখার রেললাইনের পাশেই রয়েছে বস্তি।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০২:৫০
Share:

পাশে: আড়ুপাড়ার সুভাষনগরে ত্রাণ বিলি করছেন অশোক চট্টোপাধ্যায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

লকডাউনের কঠিন সময়ে এলাকায় কে কোথায় না খেয়ে রয়েছেন, সেই খোঁজে প্রতি সকালেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ছেলে। আর ত্রাণের জন্য চাল-ডাল-আলুর জোগান দিতে ঘরে বসেই বন্ধুবান্ধব-পরিচিতদের ফোন করে সাহায্য চাইছেন অশীতিপর বাবা। এর পরে ত্রাণ জোগাড় হলে তা বিলি করার পালা। লকডাউনের কারণে কাজ হারানো মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই তাঁদের মুখে খাবার জুগিয়ে চলেছেন হাওড়ার সুভাষনগরের বাসিন্দা অশোক চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবার।

Advertisement

হাওড়া পুরসভার ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত, আড়ুপাড়ার সুভাষনগরে উন্নয়ন এখনও সে ভাবে পৌঁছয়নি। আড়ুপাড়া আর পাশের শিল্প এলাকা কামারডাঙার মাঝে, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া খড়্গপুর শাখার রেললাইনের পাশেই রয়েছে বস্তি। লকডাউনের কারণে কামারডাঙার কয়েকশো কারখানা বন্ধ হওয়ায় আড়ুপাড়া-সুভাষনগরের বস্তিবাসী এবং দিনমজুরদের রোজগারও বন্ধ। রুটি-রুজি হারানো সেই সব মানুষদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন অশোকবাবু ও তাঁর পরিবার। এই কাজে পাশে পেয়েছেন তাঁদের প্রতিবেশী এবং কয়েক জন বন্ধুবান্ধবকেও। আত্মসম্মানের কারণে হাত পেতে ত্রাণ নিতেও কুণ্ঠা বোধ করছেন ওই এলাকার যে সব নিম্নবিত্ত পরিবার, তাঁদের খোঁজ নিতেই সকাল হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন বছর পঞ্চাশের অশোকবাবু। এর পরে সময় মতো তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিয়ে আসছেন বাকিরা।

কেন এই উদ্যোগ? পেশায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট অশোকবাবু বলছেন, ‘‘১৯৭৮-এর ভয়াবহ বন্যায় আমার বর্ধমানের বাড়িতে প্রায় ১০০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তখন দেখেছিলাম তাঁদের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য বাবা গোলাভর্তি একশো কেজি ধান বের করে দিয়েছিলেন। বাবার থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি করোনার এই দুঃসময়ে অভুক্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর।’’ বাবা চন্দ্রকান্ত চট্টোপাধ্যায় পারকিনসন্সের রোগী। তবে সেই অসুস্থ শরীর নিয়েও মানুষের পাশে দাঁড়াতে পিছিয়ে নেই ৮৪ বছরের বৃদ্ধ। ত্রাণের জোগাড় থেকে চাল-ডাল-সয়াবিনের প্যাকেট তৈরি— সবেতেই ছেলের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তিনি। ওই বৃদ্ধের কথায়, ‘‘এই লকডাউনের সময়ে এলাকার বহু মানুষ অভুক্ত রয়েছেন। তাই আমরাও যতটা সম্ভব খাওয়া-দাওয়ার বিলাসিতা ত্যাগ করে সেই টাকা ত্রাণে দিচ্ছি। কারণ আমার বাবাকেও মানুষের জন্য ত্যাগ করতে দেখেছি একসময়। ছেলেকেও সেটাই শিখিয়েছি।’’

Advertisement

বাবা-ছেলের এই উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকার কয়েক জন বাসিন্দাও। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অশোকবাবুর বন্ধু, কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ অফিসার। আর্থিক সাহায্য করছেন শেখ মজিদ, শেখ সলমনের মতো বন্ধুরাও। প্রতিদিন ত্রাণের জিনিস প্যাকিংয়ে সাহায্য করছেন পাড়ার দিলীপ মাইতি, গোপাল পোদ্দার, অসিত হাজরা, নীলমণি পাঁজা-রা। অশোকবাবুর বন্ধু এবং সহকারী শেখ মজিদ বলেন, ‘‘এমন একটা কাজ করতে পারছি, এটাই অনেক, অশোকদার পাশে তাই সব সময়ে আছি।’’ আর অশোকবাবু বলছেন, ‘‘সাহায্যের ছবি তুলে অসহায় মানুষদের বিড়ম্বনা বাড়াতে চাই না। বিপদের দিনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই তো আসল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement