উলুবেড়িয়া মহকুমা অফিসে কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: সুব্রত জানা
করোনা আতঙ্ক তো রয়েছেই, গণপরিবহণ ব্যবস্থাও পুরো স্বাভাবিক হয়নি। তাই বহু সরকারি কর্মী নিজেদের উদ্যোগেই অফিস আসছেন। সে ভাবেই মোটরবাইকে অফিস আসার পথে বৃহস্পতিবার পাঁচলা মোড়ের কাছে মুম্বই রোডে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসকের দফতরের এক কর্মীর। জখম হলেন তাঁর সঙ্গী সহকর্মী। আর এই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার প্রশ্নে এ দিন দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখালেন উলুবেড়িয়া মহকুমাশাসকের (এসডিও) দফতরের অন্য কর্মীরা।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ৮ জুন থেকে রাজ্য সরকার দফতরে ৭০ শতাংশ কর্মচারীর হাজিরার কথা বললেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। ১০০ শতাংশ কর্মীকে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না দুই শিফটে কাজের নির্দেশও। অথচ, তাঁরা কী ভাবে আসবেন, তা নিয়ে দফতর চিন্তাভাবনা করছে না।
হাজিরা ৭০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা, সকাল-দুপুরে কাজের শিফট চালু করা এবং যাঁরা দূর থেকে আসেন, তাঁদের জন্য যতদিন পর্যন্ত না গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করার দাবিও তোলেন বিক্ষোভকারীরা।
সদ্য পদে যোগ দিয়েছেন মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কর্মীরা কিছু দাবি-দাওয়া তুলেছেন। সেগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।’’
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের দুর্ঘটনায় মৃত সুসেনজিৎ নস্কর (৩৪) মহকুমাশাসকের দফতরে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভাগে ‘ডেটা-এন্ট্রি অপারেটর’ পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি সাঁকরাইলের মাণিকপুরে। সকালে অফিস আসার পথে তিনি পানিয়াড়া থেকে বাইকে তুলে নেন সহকর্মী সুখরঞ্জন নস্করকে। সুখরঞ্জনের বাড়ি সাঁকরাইলেরই নলপুরে। পাঁচলা মোড়ের কাছে বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। পিছন থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি ট্রাক মোটরবাইকটিকে পিষে দেয়। গুরুতর জখম অবস্থায় পুলিশ সুসেনজিৎ ও তাঁর সহকর্মীকে উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সুসেনজিৎকে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এ খবর পৌঁছতেই মহকুমাশাসকের অফিসে ডেপুটি ম্যাডিস্ট্রেটদের ঘিরে দফায় দফায় বিক্ষোভ শুরু করে দেন কর্মীরা। তাঁদের অনেকে হলদিয়া, পাঁশকুড়া, কলকাতা, হাওড়ার মতো দূরবর্তী এলাকা থেকেও আসেন। তাঁদের অভিযোগ, সবাইকে প্রতিদিন আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে, তাঁরা অনেকেই গাড়ি ভাড়া করে বা ঝুঁকি নিয়ে মোটরবাইকে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সুসেনজিৎও মুম্বই রোড ধরে মোটরবাইকে অফিসে আসতেন। এমনকি, বহু কর্মীকে শনি-রবিবারেও আসতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। লকডাউনের সময়েও তাঁদের অনেককে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। যাঁরা ওই সময়ে আসেননি, তাঁদের হেনস্থাও করা হয়। বলেও কর্মীরা অভিযোগ করেন।
বিক্ষোভকারীরা এ দিন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে স্মারকলিপি দেন। মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হওয়ার পরে সুসেনজিতের দেহ নিয়ে এসে কর্মীরা মহকুমাশাসকের দফতরে ফের এক দফা বিক্ষোভ দেখান। মহকুমাশাসককেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়।