Coronavirus

নিষেধ মানুন, বাড়ুক সচেতনতা

কী করবেন, কী করবেন না— এ নিয়ে সরকারি স্তরে নানা মাধ্যমে প্রচার চলছেই। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে এখনও সেই বিধিনিষেধ না-মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যার ফলে বিপদে পড়তে পারেন তিনি নিজে। বিপদগ্রস্ত হতে পারেন তাঁর নিকটজনেরাও। এই রোগ এবং তার মোকাবিলার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করলেন চিকিৎসক প্রকাশচন্দ্র বাগ (সুপারিন্টেন্ডেন্ট, শ্রীরামপুর শ্রমজীবী কোভিড-১৯ হাসপাতাল) এই রোগে ৬% মানুষ কঠিন ভাবে অসুস্থ হন। তাঁদের ফুসফুস বিকল হওয়া, সেপটিক শক, অঙ্গ-বৈকল্য এবং মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। ১৪% রোগীর মধ্যে তীব্র উপসর্গ দেখা যায়। তাঁদের মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ০৬:২৭
Share:

আমাদের দেশ-সহ প্রায় গোটা বিশ্ব এখন ঘরবন্দি। আমাদের বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিকাঠামোর পুনরুদ্ধার অত্যন্ত জরুরি। সকলের মিলিত প্রয়াস ও সচেতনতায় আমরা জয়ী হব, এই হোক ধ্যান-জ্ঞান। করোনামুক্ত দেশ তথা পৃথিবী গড়ব, এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা, সঙ্কল্প।

Advertisement

করোনাভাইরাস— যার পোশাকি নাম কোভিড-১৯, সেই রোগটিকে এখন ‘বিশ্ব মহামারি’ ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জ্বর, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত রোগীর প্রধান লক্ষণ। ভাইরাসটি ফুসফুসকে আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ। পরে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়াও অবসাদ, বমি হওয়া, গলা ব্যথা, অঙ্গ বিকল হওয়া, মাথা ব্যথা, পেটের সমস্যার উপসর্গও দেখা যায়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে আবার অন্যান্য উপসর্গ থাকলেও জ্বর থাকে না। উপসর্গ প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির ‘ইনকিউবেশন পিরিয়ড’ ১৪ দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু গবেষকের মতে, এর স্থায়িত্ব ২৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দি-জ্বর এবং ফ্লু-এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক।

এই রোগে ৬% মানুষ কঠিন ভাবে অসুস্থ হন। তাঁদের ফুসফুস বিকল হওয়া, সেপটিক শক, অঙ্গ-বৈকল্য এবং মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। ১৪% রোগীর মধ্যে তীব্র উপসর্গ দেখা যায়। তাঁদের মূলত শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়। ৮০% রোগীর মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায়। জ্বর এবং কাশি ছাড়াও কারও কারও নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা যেতে পারে। বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাঁদের কোনও অসুখ রয়েছে (অ্যাজমা, ডায়াবিটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি) তাঁদের মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চিন থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করে জানা গিয়েছে, এই রোগে নারীদের চেয়ে পুরুষের মৃত্যুর হার সামান্য বেশি।

Advertisement

আমরা কী ভাবে সচেতন থাকব?

মানুষজনের চলাচল সীমিত করে দেওয়া। সাবান দিয়ে হাত ধুতে সবাইকে উৎসাহিত করা। জমায়েত বন্ধ করা। সর্দি ও কাশি হলে মাস্ক ব্যবহার করা। কথোপকথনের সময় অন্তত ১ মিটারের বেশি দূরত্ব বজায় রাখা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ এবং উপদেশ সঠিক ভাবে মেনে চলা। স্বাস্থ্যকর্মীদের নির্দিষ্ট পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা করা। সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহার করে সুফল পাওয়ার কিছু নজির আছে। প্রশাসনের নির্ধারিত হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা গ্রহণ করা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে, প্রশাসনিক নিয়মকানুন ও নিষেধাজ্ঞা পালন করে নিজে সম্যক ভাবে সচেতন হওয়া অন্যকেও সচেতন করে তোলা।

এটি এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস, যা এর আগে কখনও মানুষের মধ্যে এত বেশি ভাবে ছড়ায়নি। ১৮৪টি দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হয়েছে ১ লক্ষেরও বেশি মানুষের। করোনাভাইরাসের অনেক প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে এতদিন মাত্র ছ’টি প্রজাতি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে দেখা গিয়েছে। নতুন ধরনের ভাইরাসটির কারণে সেই সংখ্যা এখন থেকে হবে সাত। ল্যাটিন ভাষার ‘করোনা’র অর্থ ‘মুকুট’। দ্বি-মাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির আবরণ থেকে গদা-আকৃতির প্রোটিনের কাঁটা দেখা যায়। সেই কারণে এটিকে অনেকটা মুকুট বা সৌর-করোনার মতো দেখায়। তাই এমন নাম। ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯। যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement