কারণ ছাড়া রাস্তায় বেরোতেই কান ধরে ওঠবোস করাল পুলিশ। খানাকুলে ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
অসচেতনতা একেবারেই নেই, এমন নয়। কিন্তু মোটের উপরে হুগলিতে লকডাউন মানার প্রবণতা বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে মানুষ নিজেরাই যথাসম্ভব ঘরবন্দি থাকার শপথ নিচ্ছেন। রাস্তায় বেরোলে মুখে মাস্ক বাঁধতে ভুলছেন না তাঁরা। ফলে, রাস্তাঘাটে মাস্কহীন মানুষ প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশও কড়া মনোভাব দেখানো শুরু করেছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন। কঠোর ভাবে তা পালনের নির্দেশও দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনও আরও কড়া পদক্ষেপের কথা ভাবছে। এ দিন থেকেই সন্ধ্যা ৬টার পরে একমাত্র ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশি টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চন্দননগর কমিশনারেট। পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় মুদিখানা খোলা থাকলেই এক শ্রেণির মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ বার আর পুলিশ এমনটা বরদাস্ত করবে না।’’ এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস জানান, বাজারে ভিড় কমাতে সন্ধ্যায় বাড়ি বাড়ি আনাজ পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, আরামবাগ শহর এবং গ্রামাঞ্চলের যে সব জায়গায় ভিড় হচ্ছিল, সেখানে বাঁশের ব্যারিকেড করে পুলিশ পাহারা চলছে। রাস্তায় রাস্তায় চলছে ‘নাকা চেকিং’। আরামবাগে বাজারে বিক্রেতার বসার জায়গা থেকে ক্রেতারা যাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়ান, সেই মাপ করে বাঁশ দিয়ে ঘেরা হয়েছে। মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে, অযথা ভিড় যেন না হয়। ভোর ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বাজারের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
শ্রীরামপুরে বিশেষত মাহেশ এলাকায় বিভিন্ন পাড়ায় বাঁশের ব্যারিকেড করে রাস্তা আটকে দেওয়ার হিড়িক পড়েছে সোমবার থেকে। মঙ্গলবারেও কিছু জায়গায় ব্যারিকেড করা হয়। যাতে বাইরের লোক ঢুকতে না পারেন। কিছু জায়গায় আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বেরোবেন না। শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি পাড়ার লোকেরা জানান, সবাই মিলে ঠিক করা হয়েছে, প্রতিদিন সকালে এক জন আনাজ বিক্রেতা এবং এক জন মাছ বিক্রেতা পাড়ায় আসবেন। সবাই তাঁদের থেকে কেনাকাটা করবেন। তা হলে কাউকেই বাজারে যেতে হবে না। পুরসভা এখনও এলাকা স্যানিটাইজ় করে উঠতে পারেনি। কিছু জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারা জল দিয়েই রাস্তাঘাট ধোওয়ার চেষ্টা করেন।
এ দিন সকালে উত্তরপাড়া বাজার পাশের জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরিরর মাঠে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘মাঠ বড় হওয়ায় দূরত্ব বজায় রাখতে সমস্যা হবে না।’’
তবে, শ্রীরামপুর, মশাট, সিঙ্গুর, বা চাঁপদানির কিছু বাজারে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে অনেকেই যে সচেতন নন, এ দিনও তেমন দেখা গিয়েছে। পান্ডুয়া, মগরার বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে ‘নো মাস্ক, নো পেট্রোল’ বোর্ড ঝোলানো হয়েছে। তবে পান্ডুয়া, বলাগড়, মগরার রাস্তায় বা বাজারে মাস্ক ছাড়াই বহু মানুষকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন উপেক্ষা করে এক করে খুলছে চা, স্টেশনারি-সহ বিভিন্ন ধরনের দোকান।