চলছে লালারস সংগ্রহ। পান্ডুয়া ব্লকের হরাল-দাসপুর পঞ্চায়েতে। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের করোনা মানচিত্রে হুগলি পঞ্চম স্থানেই রয়েছে। জুলাই মাসে এখানে দু’হাজারের উপরে মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলেন। পরিসংখ্যান বলছে, অগস্টে সেই সংখ্যা বাড়ছে। এই মাসের প্রথম ১২ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। গত ১০ দিনে ১৩৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ, এই দশ দিনে দৈনিক গড় আক্রান্ত প্রায় ১৩৪ জন।
জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা অবশ্য দাবি করছেন, সার্বিক পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, সম্প্রতি পরীক্ষার সংখ্যা অনেকাংশে বেড়েছে। এক সময় দিনে শ’চারেক নমুনা পরীক্ষা হচ্ছিল। কিছু দিন আগে তা বেড়ে ছ’-সাতশো হয়। গত কয়েক দিন ধরে দৈনিক প্রায় ২৬০০ পরীক্ষা করানো হচ্ছে। সেই নিরিখে বিচার করলে সংক্রমণের শতকরা হার মোটেই বাড়েনি। বরং কমেছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) প্রলয় মজুমদারের দাবি, ‘‘যত পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে বড়জোর ৪-৫ শতাংশ পজ়িটিভ বেরোচ্ছে।’’
বুধবার পর্যন্ত এই জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছুঁইছুঁই। বুধবার সন্ধ্যায় রাজ্য সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এই জেলায় মোট ৪৯২৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। গত ১০ দিনের মধ্যে ৭ দিন সংক্রমিতের সংখ্যা ১০০ পেরিয়েছে। ৭ অগস্ট এই সংখ্যা ২৩৯ হয়েছিল। দু’দিন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল নব্বইয়ের ঘরে। গত ২ তারিখ অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৮১ জন। বুধবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২১৯ জনে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সংক্রমিতদের অধিকাংশই উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত। বহু ক্ষেত্রে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা চলছে। কোনও ক্ষেত্রে ‘সেফ হাউসে’ পাঠানো হচ্ছে। সমস্যা থাকলে পাঠানো হচ্ছে কোভিড হাসপাতালে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি করে আসছিল, করোনা পরীক্ষা যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে না। প্রশাসনের একাংশও মনে করছিল, সমাজে উপসর্গহীন সংক্রমিত লোকজন ছড়িয়ে থাকতে পারেন। এই ধরনের সংক্রমিতদের খুঁজে বের করতেই বিভিন্ন জায়গায় ‘র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা’ শুরু হয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়েছে কিনা— তা জানতেও এই পরীক্ষার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। র্যাপিড পরীক্ষা শিবিরে মাত্র এক থেকে দেড় শতাংশ মানুষ পজ়িটিভ হচ্ছেন বলে প্রশাসনের আধিকারিকদের দাবি।
প্রশাসনের কর্তারা জানান, চিকিৎসা পরিকাঠামোর দিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে। ব্যান্ডেল ইএসআই হাসপাতালে সম্ভাব্য কোভিড আক্রান্তদের রাখা হচ্ছিল। সেটিকে পুরোদস্তুর কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছে। গোঘাটের ভিকদাসে ‘সেফ হাউসে’ শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
এই জেলায় প্রশাসনের আধিকারিকদের স্বস্তি দিচ্ছে মৃত্যুর হার। এ পর্যন্ত এখানে মৃতের সংখ্যা ৭৭। গত ১০ দিনে মারা গিয়েছেন ১৫ জন। তার মধ্যে দু’দিনে মৃত ৭। বাকি ৮ দিনে গড়ে ১ জন করে মারা গিয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মৃত্যুর সংখ্যা যথাসম্ভব কমিয়ে আনা আমাদের লক্ষ্য। সেই চেষ্টা চলছে।’’