জটিলতা: উদ্বোধন হয়ে পড়ে রয়েছে কর্মতীর্থ। গোঘাটের ভিকদাসে। —নিজস্ব চিত্র
প্রকল্প ছিল, পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে রাজ্য সরকার। তদারকির জন্য নাম মাত্র ভাড়ার বিনিময়ে ‘কর্মতীর্থ’ নামে মার্কেট কমপ্লেক্স থেকে নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করতে পারবেন ক্ষুদ্র-প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেই নির্দেশিকা না মেনে ঘর পিছু ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা সিকিউরিটি ডিপোজিট রাখার সিদ্ধান্ত নিল গোঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতি।
স্থানীয় ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোগপতিদের অভিযোগ, ‘কর্মতীর্থ’ প্রকল্প নিয়ে ব্যবসা করতে চাইছে পঞ্চায়েত সমিতির শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা। অন্যায়ভাবে টাকা জমা রাখতে বলছে। তাছাড়া ঘর পেতে শাসক দলের নেতাদেরই আবেদন পড়েছে বেশি। যাঁদের জন্য এই প্রকল্প প্রচারের অভাবে তাঁদের আবেদন কম।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজ্যের প্রতি ব্লকে অন্তত একটি করে ‘কর্মতীর্থ’ নামে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করার প্রকল্প ঘোষণা হয় ২০১৪ সালের জুলাই মাস নাগাদ। প্রকল্পটি রূপায়ণের জন্য সরকারের তিনটি দফতর— যথাক্রমে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর, সংখ্যালঘু বিষয় এবং মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর এবং স্বনির্ভরগোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরকে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়।
স্বনির্ভরগোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের তহবিলে নির্মিত গোঘাট-১ ব্লকের ভিকদাসে ‘কর্মতীর্থ’টি উদ্বোধন হয় গত মার্চ মাসের ৬ তারিখে। যদিও ঘর বিলি এখনও হয়নি। তিনতলা এই কর্মতীর্থে মোট ৪১টি ঘর। আপাতত আবেদনের ভিত্তিতে দু’তলা পর্যন্ত মোট ২৬টি ঘর দেওয়া হবে। আবেদন জমা পড়েছে ৪২টি আবেদন পড়েছে। আগামী ১৯ জুন শুনানির জন্য তাঁদের পঞ্চায়েত সমিতিতে ডাকা হয়েছে।
গোঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, সম্প্রতি পঞ্চায়েত সমিতির অর্থ স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, তিনতলা কর্মতীর্থ ভবনের একতলায় যাঁরা ঘর নেবেন তাঁদের স্কোয়্যার ফুট অনুযায়ী প্রায় ৫০ হাজার টাকা জমা রাখতে হবে। আর দোতলায় যাঁরা ঘর নেবেন তাঁদের রাখতে হবে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্পের নির্দেশিকা না মেনে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কি না, সেটা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা গোঘাটের তৃণমূল নেতা মনোরঞ্জন পাল বলেন, “আইনসঙ্গত কাজ কি না জানি না। ঘর নিয়ে অন্যকে বিক্রি দেওয়া, বা তালা মেরে বছরের পর বছর রেখে দেওয়া, বিদ্যুৎ বিল না মেটানো— এমনই নানা ঝঞ্ঝাট এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টাকাটা ফেরৎযোগ্য।” প্রচারের ঘাটতি এবং শাসক দলের নেতাদের আবেদনের ভিড় প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রচার যথেষ্ট হয়েছে। আবেদন খতিয়ে দেখে তবেই দেওয়া হবে।”
গোঘাট-১-এর বিডিও অনন্যা ঘোষ বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির তরফে এমন করা হয়েছে শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’ স্বনির্ভরগোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের আধিকারিক রাখী বিশ্বাস বলেন, “কর্মতীর্থ তদারকির জন্য সংশ্লিষ্ট উপভোক্তারাই পরিচালনা কমিটি গঠন করে ভাড়ার ব্যবস্থা করবেন। তার বাইরে পঞ্চায়েত সমিতি কিছু সিদ্ধান্ত নিলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”