সভাপতি পদে নিয়োগ নিয়ে ডামাডোল

তারকেশ্বর কলেজে বসল প্রশাসক

ডামাডোল চলছিল বছর খানেক ধরে। অবশেষে তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজে প্রশাসক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বসাল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০২:৪২
Share:

ডামাডোল চলছিল বছর খানেক ধরে। অবশেষে তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজে প্রশাসক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর) বসাল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

Advertisement

মঙ্গলবার এই মর্মে নির্দেশ জারি করেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক সুজিতকুমার চৌধুরী। আগামী ৬ মাস খানাকুলের রাজা রামমোহন রায় মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দেবব্রত মজুমদার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, প্রশাসনিক, আর্থিক এবং পঠনপাঠন সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় তিনিই দেখভাল করবেন।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক সুজিত চৌধুরী বলেন, ‘‘ওখানে পরিচালন সমিতির সভাপতি পদ নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। সেই কারণেই প্রশাসক বসানো হয়েছে।’’ অধ্যক্ষ অমলকান্তি হাটির বক্তব্য, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় যা ভাল মনে করেছে, তাই করেছে। আমাদের কাছে যা জানতে চাওয়া হয়েছিল, তা আমরা লিখিত ভাবে জানিয়ে দিই। এখন বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত প্রশাসকই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

Advertisement

এক বছর আগে তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হন পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান উত্তম কুণ্ডু। কিন্তু ওই পদে তো বটেই, আদপেই তিনি পরিচালন সমিতির সদস্য হতে পারেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। অভিযোগ ওঠে, ক্ষমতার বলে অনিয়ম করে উত্তমবাবু ওই পদে বসেছেন। অথচ সব জেনেশুনেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কলেজে অর্থ সাহায্য করেছে, এমন কিছু প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি কলেজের দাতা-সদস্য (ডোনার-মেম্বার) হিসেবে বিবেচিত হন। তারকেশ্বর পুরসভা এর অন্যতম। এ বার তৃণমূল প্রভাবিত পুরকর্মীদের সংগঠন ‘তারকেশ্বর মিউনিসিপ্যাল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে উত্তমবাবুর নাম পাঠানো হয়। অভিযোগ, ২০১১ সালে গঠিত ওই সংগঠনটি আদৌ কলেজের দাতা-সদস্য নয়। ফলে, তাদের তরফে পরিচালন সমিতিতে ঢোকার ঢোকার প্রশ্নই ওঠে না। কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই সংগঠনের আবেদনক্রমে উত্তমকে সমিতির সদস্য করে নেন।

পরে আলোচনার মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে উত্তমবাবুর নাম ঠিক হয়। সরকারি প্রতিনিধি তথা ‘উত্তম ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ নইম ওই পদে উত্তমের নাম প্রস্তাব করেন। এতে অবশ্য জটিলতা বাড়ে।

ওই পদে উত্তমবাবুর বসার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং কলেজ সমূহের পরিদর্শককে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসতেই সিপিএম প্রভাবিত পুরকর্মীদের সংগঠন ‘তারকেশ্বর মিউনিসিপ্যালিটি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর প্যাডে সভাপতি হিসেবে উত্তমবাবুর নাম সুপারিশ করে জমা দেওয়া হয়। কেননা, এই সংগঠনটি কলেজের ডোনার-মেম্বার।

অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদলয়ের তরফে অধ্যক্ষের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। অধ্যক্ষ লিখিত রিপোর্ট পাঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে অবশ্য অনিয়ম ধরা পড়ে।

প্রশাসক বসানো নিয়ে কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘কলেজের সুনামের পক্ষে খুব লজ্জাজনক ব্যাপার হল। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষই ঠিক করে নিতে পারতেন। কিন্তু তা না করাতেই এমনটা হল।’’ অনিয়মের অভিযোগ অধ্যক্ষ অবশ্য মানেননি। উত্তমবাবুর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি দিল্লিতে আছি। এ ব্যাপারে কিছু জানি না।’’

কলেজ সূত্রের খবর, তদন্ত চলায় পরিচালন সমিতির অস্তিত্ব কার্যত ছিল না। কলেজ পরিচালনায় তার প্রভাব পড়ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়াই রীতি। কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সমিতিতে আলোচনা ছাড়াই বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

এ বার সমস্যা মিটবে, আশায় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement