কর্মহীন: বন্ধ হয়ে যাওয়া ভদ্রেশ্বরের কারখানা — নিজস্ব চিত্র।
নতুন বছরের দ্বিতীয় দিনে ভদ্রেশ্বরের বিঘাটির গর্জি গ্রামে একটি রাসায়নিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেল। এই সিদ্ধান্তের পিছনে আর্থিক সঙ্কট, কাঁচামালের অভাব এবং শ্রমিক অসন্তোষকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়লেন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে শ’তিনেক শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, লকডাউন পর্বে উৎপাদন বন্ধ ছিল। ওই সময় বেতন মেলেনি। এখন কারখানা বন্ধ হওয়ায় সংসার চালানো মুশকিল হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। রবিবার তাঁরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত ‘বেআইনি’ বলে দাবি করেছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের। সমস্যা সমাধানে তাঁরা আলোচনার পক্ষপাতী। কারখানার এআইইউটিইউসি সভাপতি তথা সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, নিঃশর্তে উৎপাদন চালুর দাবিতে আজ, সোমবার তাঁরা শ্রমিকদের নিয়ে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে দরবার করবেন।
দিল্লি রোডের ধারে ‘ইন্ডোট্যান কেমিক্যালস লিমিটেড’ নামে ওই কারখানায় চামড়াজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য রাসায়নিক তৈরি হয়। শনিবার সন্ধে ৭টা থেকে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, আর্থিক সঙ্কটের কারণে শ্রমিকদের পাওনা সময়মতো দেওয়ার পরিস্থিতি নেই। গত ২১ ডিসেম্বর চন্দননগরের যুগ্ম শ্রম-কমিশনার কিংশুক সরকারের দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বোনাস নিয়ে আলোচনা হয়। নির্দিষ্ট অঙ্কের তুলনায় কম বোনাস দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। ২৯ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষ বোনাস দেওয়া শুরু করলে শ্রমিকরা তা নিতে অস্বীকার করেন। গোলমাল হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। কারখানার এক কর্তা বলেন, ‘‘বরাত মিলছে না। ভিন্ রাজ্য থেকে কাঁচামাল আসছে না। সব মিলিয়ে পুরোদমে উৎপাদনের পরিস্থিতি নেই। শ্রমিকরা সবটাই জানেন। তা সত্বেও গত ২৯ ডিসেম্বর তাঁরা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছেন। গালিগালাজ করে আমাদের আটকে রাখা হয়েছিল। এই অবস্থায় সুষ্ঠু ভাবে কাজ চালানো মুশকিল।’’ ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিসে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ওই দিন শ্রমিকরা আইন হাতে তুলে নেন। এই বিশৃঙ্খল আচরণের জন্য কারখানার স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখা যায়নি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত।
পক্ষান্তরে, শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, সহযোগিতা সত্বেও শ্রমিকদের নানা ভাবে নিষ্পেষিত হতে হচ্ছে। বর্ষীয়ান শ্রমিক নেতা দিলীপবাবু বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় উৎপাদন হয়নি। ওই দুঃসময়ে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন দেননি। তাতেও শ্রমিকেরা ঘাম ঝরিয়ে উৎপাদন করছেন। অথচ, ইচ্ছেমতো কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হল। সমস্যা থাকলে আলাপ-আলোচনায় মেটাতে হবে, শ্রমিকের পেটে লাথি মেরে নয়।’’
‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ প্রত্যাহারের দাবিতে এআইইউটিইউসি-র তরফে রবিবার কারখানা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের অতিরিক্ত শ্রম-কমিশনার এবং চন্দননগরের যুগ্ন শ্রম-কমিশনারের কাছেও। কারখানার আইএনটিটিইউসি সভাপতি বিদ্যুৎ রাউত বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ প্রায়ই খুশিমতো কারখানা বন্ধ করে দেন। শ্রমিকদের কথা ভাবেন না। কর্তৃপক্ষের এই অনমনীয় মনোভাবের বিরোধিতা করছি। ওঁরা ব্যবসা চালাতে চান কিনা, সেটাই প্রশ্ন। বোনাস নিয়ে বিরোধ চলছে, ঠিকই। তবে আলোচনায় একটা জায়গায় আসতে হবে। অন্য সমস্যাও আলোচনায় মেটাতে হবে। উৎপাদন চালুর দাবিতে সোমবার আমরা যুগ্ম শ্রম-কমিশনারের কাছে যাব।’’