সঞ্জীবনী: ঝড়ে উপড়ে যাওয়া গাছ প্রতিস্থাপন উত্তরপাড়ায়। —নিজস্ব িচত্র
এর আগে কলকাতায় হয়েছে। এ বার উত্তরপাড়া এবং কোন্নগর শহরে ঝড়ে উপড়ে যাওয়া বেশ কিছু গাছ প্রতিস্থাপন শুরু হল। একই সঙ্গে বর্ষার মুখে নতুন করে বৃক্ষরোপণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
প্রথমে আমপান, তারপরে কালবৈশাখী— আট দিনের মধ্যে দু’দফার ঝড়ে হুগলি জুড়ে বহু গাছ ভেঙেছে বা উপড়ে গিয়েছে। বন দফতরের হিসাব অনুযায়ী, জেলার ১৩টি পুরসভা-সহ ১৮টি ব্লকে অন্তত ৭০ হাজার গাছ পড়েছে। তার মধ্যে বন দফতরের আওতাভুক্ত ১২টি ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত গাছ গণনার কাজ চলছে।
এত গাছ পড়ে যেতে দেখে পরিবেশে তার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে উপড়ে যাওয়া গাছ প্রতিস্থাপনের দাবিও উঠতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় উত্তরপাড়া এবং কোন্নগর পুর কর্তৃপক্ষ দেরি না-করে শুক্রবার থেকেই কাজে নামলেন। উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের গেটের মুখে কয়েকশো বছরের পুরনো দু’টি বটের মধ্যে বাঁ দিকের গাছটি আমপানে পড়ে যায়। এরপরই পুরসভার জনস্বাস্থ্য ও পরিষেবা বিভাগের কর্তা অঞ্জন বণিক গাছ প্রতিস্থাপনে অভিজ্ঞ মানুষজনকে নিয়ে দু’টি দল তৈরি করেন। শুক্রবার রাত থেকে কাজ শুরু হয়। একই সঙ্গে ভদ্রকালী শিবাজি স্পোটিং ক্লাবের মাঠের একটি এবং মাখলার মানিকপিরতলার আরও একটি গাছ প্রতিস্থাপনের কাজও শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
উত্তরপাড়ার পুর প্রশাসক দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘পুরনো বড় বড় গাছগুলো যে ভাবে উপড়ে পড়ে গিয়েছে, দেখে কষ্ট লাগছিল। পুরসভার সীমিত সাধ্যের মধ্যে যে গাছগুলি প্রতিস্থাপিত করা যাবে, তা করা হচ্ছে।’’
একই ভাবে কোন্নগর পুর এলাকার ১২-১৪টি গাছকে চিহ্নিত করে প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। কোন্নগরের জোড়াপুকুর ধার, অরবিন্দ রোড, হাতিরকুল-সহ কয়েকটি এলাকায় ওই কাজ চলছে। জিটি রোড লাগোয়া ব্রহ্মসমাজ এলাকায় একটি কদম গাছকে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। এখানেও পুর কর্তৃপক্ষ ভিন্ন ভিন্ন দল গঠন করেছেন। সেই সব দল কাজ করছে বিশিষ্ট গাছ বিশেষজ্ঞ বংশীচরণ দাসের তত্ত্বাবধানে। কোন্নগরের পুর প্রশাসক বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখানে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ির কয়েকটি গাছও ঝড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলিকে বাঁচানো ছাড়াও পুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গাছ প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করেছি। শনিবার থেকে নতুন করে পুর এলাকায় গাছ লাগানোর কাজও শুরু হয়েছে। শাল, সেগুন, মেহগনি-সহ মোট ৫৬৭টি প্রজাতির গাছ পোঁতার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি আমরা।’’
দুই শহরের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। সব পড়ে যাওয়া
গাছকে প্রতিস্থাপন এবং একটু যত্ন করলেই ফের বাঁচানো যায়। এক দশকেরও বেশি আগে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রথম এই পদক্ষেপ করা হয়।’’