সন্তান কোলে দৃষ্টিহীন দম্পতি। —নিজস্ব িচত্র
জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন উলুবেড়িয়া গড়চুমুকের বছর কুড়ির লাবণি এবং তাঁর স্বামী মেমারির বাসিন্দা সুখেন দাস। বছর দুয়েক আগে বিয়ে করেন তাঁরা। আট মাস আগে জন্ম নেয় তাঁদের সন্তান। কিন্তু চিকিৎসক জানান, তাঁদের সন্তানও দৃষ্টিহীন। প্রথমে ভেঙে পড়লেও হার মানেননি এই দম্পতি। অবশেষে ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর দৃষ্টি ফিরে পেল তাঁদের ছেলে।
লাবণি এবং সুখেন পড়াশোনা করতেন উলুবেড়িয়ার জগৎপুর গ্রামের একটি প্রতিবন্ধী স্কুলে। সেখানেই তাঁদের আলাপ। সুখেন হাওড়ার একটি বেসরকারি কারখানায় কাজ করেন। লাবণি গৃহবধূ। আট মাস আগে তাঁদের পুত্র সন্তান হয়। কিন্তু সন্তানের দৃষ্টিহীন হওয়ার খবর জানতে পেরে হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন তাঁরা। লাবণি এবং সুখেন বলেন, “আমরা জন্ম থেকে পৃথিবীর আলো দেখিনি। সন্তানও দৃষ্টিহীন হওয়ায় ভীষণ হতাশ হয়ে পড়ি। তারপর ঠিক করালাম, যে ভাবেই হোক ওর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনবই।”
এরপর শুরু হয় তাঁদের লড়াই। তবে পথটা খুব সহজ ছিল না। সন্তানকে নিয়ে তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরাঘুরি শুরু করেন। কিন্তু আশ্বাস বা সহযোগিতা কোনওটাই মিলছিল না। এরপর তাঁরা ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। এখানে সন্তানের দৃষ্টি ফেরানোর আশ্বাস দেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তারপরেই আসে আর এক বাধা। তাঁরা জানতে পারেন, অস্ত্রোপচারের খরচ তাঁদের সাধ্যের বাইরে। দম্পতির অসহায় অবস্থার কথা শুনে পাশে দাঁড়ালেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মৃন্ময় দাস। তিনি অস্ত্রোপচারের খরচের বেশিরভাগই মকুব করে দেন। পাশাপাশি কিছু আর্থিক সাহায্য মেলে তাঁদের বিদ্যালয় থেকে। ওই চিকিৎসকের হাতেই দৃষ্টি ফিরে পায় তাঁদের সন্তান।
চিকিৎসক মৃন্ময় দাস বলেন, “ওই দম্পতির সন্তানের দৃষ্টি ফিরিয়ে দিতে পেরেছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওনা।” আর ওই দম্পতি বলছেন, “চিকিৎসকের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এবার সন্তানের চোখ দিয়েই পৃথিবীর আলো দেখব আমরা।”
লাবণি এবং সুখেনের বিদ্যালয় আনন্দ ভবন ডেফ অ্যান্ড ব্লাইন্ড স্কুলের শিক্ষক অজয় দাস বলেন, “ওঁরা চিকিৎসার সুযোগ পাননি, কিন্তু ওঁদের সন্তান সেই সুযোগ পেয়ে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে, এতেই আনন্দ হচ্ছে।”