দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়বেন বিতর্কিত তৃণমূল নেতার স্ত্রী

রাজ্য নেতৃত্ব যে আদতে ঠুঁটো, তা প্রমাণ করলেন তারকেশ্বর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুণ্ডু। দলেরই একাংশের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও নিজে শুধু টিকিট হাতানোই নয়, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে স্ত্রী-কেও দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। উত্তমবাবুর স্ত্রী কুহেলী কুণ্ডু আবার তারকেশ্বর শহর মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী। এখন দেখার, দল তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে কি না। যদিও উত্তমের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের উপর ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার নেতা-কর্মীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

রাজ্য নেতৃত্ব যে আদতে ঠুঁটো, তা প্রমাণ করলেন তারকেশ্বর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম কুণ্ডু। দলেরই একাংশের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও নিজে শুধু টিকিট হাতানোই নয়, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে স্ত্রী-কেও দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। উত্তমবাবুর স্ত্রী কুহেলী কুণ্ডু আবার তারকেশ্বর শহর মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী। এখন দেখার, দল তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে কি না। যদিও উত্তমের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের উপর ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার নেতা-কর্মীরা।

Advertisement

বস্তুত গত পাঁচ বছরে উত্তমের নানা কাজের জন্য বারে বারেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। থানায় ঢুকে পুলিশকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পুরভবন ঘিরে ফেলে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। জেল খাটতে হয়। তার পরেও অবশ্য তাঁর প্রতাপ কমেনি। তারকেশ্বর বাসস্ট্যান্ডের পাশে নিয়ম ভেঙে দশতলা ভবন তৈরি থেকে শুরু করে দেবোত্তর সম্পত্তিতে নিকটাত্মীয়কে বাড়ি বানিয়ে দেওয়া-সহ নানা অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছেও বহু অভিযোগ জমা পড়ে।

ওই সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে দলের ভাবমূর্তির কথা ভেবে তৃণমূল নেতৃত্ব এ বার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে না। তার বদলে, কুহেলীকে প্রার্থী তালিকায় ঢোকানো হয়। এর পরেই অবশ্য উত্তমের হয়ে ব্যাট ধরেন স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী রচপাল সিংহ এবং সাংসদ অপরূপা পোদ্দার। তৃণমূল শিবিরের খবর, মন্ত্রী রচপাল সরাসরি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের বাড়িতে চলে যান উত্তমের হয়ে তদ্বির করতে। অপরূপাও উত্তমের জন্য দলকে চাপ দেন। শেষ পর্যন্ত দল তাঁদের কথাই মেনে নেন। উত্তম ৭ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিট পেয়ে যান। এর পরেই অবশ্য উত্তম ‘নিজ-মূর্তি’ ধরেছেন বলে তৃণমূলের অন্দরেই ক্ষোভ। বুধবার উত্তমের স্ত্রী কুহেলি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করেন। তিনি গত বারের কাউন্সিলর তথা তৃণমূল প্রার্থী কাকলী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। আগের বার উত্তম এই ওয়ার্ড থেকেই জেতেন। এ বার ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডেও গত বারের কাউন্সিলর উত্তম ভাণ্ডারীর বিরুদ্ধে উত্তম ঘনিষ্ঠ এক নেতা নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। বিতর্ক এড়াতে উত্তমের কৌশলী মন্তব্য, “কে কোথায় দাঁড়িয়েছে, জানি না। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। তৃণমূলের প্রতীকে যাঁরা দাঁড়াবেন, তাঁদের জেতানোর জন্য আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব। এর বেশি কিছু আপনাদের বলব না।”

Advertisement

উত্তম মুখে যা-ই প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করুন, গোটা বিষয়টি নিয়ে তারকেশ্বরে তৃণমূলের অন্দরে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এলাকার সাংসদ-বিধায়কের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ওঁরা তদ্বির করে টিকিট আদায় করলেও উত্তম যে আদপেই ওঁদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সে কথাই আবারও প্রমাণ হচ্ছে। দলের একাংশ পুরো বিষয়টি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সি এবং মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জানিয়েছে। তারকেশ্বরের এক তৃণমূল নেতা বলেন, “উত্তম দলকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য দলকে চ্যালেঞ্জ করে নিজের স্ত্রী-কে দাঁড় করিয়েছেন উনি। আর উত্তম ভাণ্ডারী তাঁর বিরুদ্ধে গালিগালাজের অভিযোগ করেছেন দিন চারেক আগে। সেই কারণে ওই ওয়ার্ডেও নির্দল দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। দল কি এর পরেও ব্যবস্থা নেবে না?” এ ব্যাপারে তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত বলেন, “যা বলার দলকে বলেছি।”

অন্যদিকে তারকেশ্বরের সিপিএম নেতৃত্ব অভিযোগ এনেছেন, উত্তমের দলবল তাঁদের প্রার্থীকে ঘেরাও করে রাখে। তার ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। বিরোধীদের অভিযোগ, উত্তমের ‘সন্ত্রাস’-এ ওই ওয়ার্ডে অন্য কেউ মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। একই ভাবে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তম-ঘনিষ্ঠ তৃণমূল প্রার্থী পুতুল গোস্বামীর বিরুদ্ধেও মনোনয়ন জমা পড়েনি। এ ব্যাপারে উত্তমের প্রতিক্রিয়া, “বিরোধীরা যা খুশি বলুক। কিচ্ছু বলার নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement