সৌম্যদীপ গুড়িয়া ও সুপ্রিয় মাজি।
উচ্চ মাধ্যমিকের ফল জানতে পরে খুশির বন্যা বয়ে গিয়েছিল শ্যমপুরের সৌম্যদীপ ও সুপ্রিয় মাজি ও হুগলির কামারকুণ্ডুর বাসিন্দা ত্রিদিবের পরিবারে। কিন্তু আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে হোঁচট খেয়ে পড়ছে তারা। কারণ, তাদের দারিদ্রতা। শ্যামপুরের গুজারপুর এলাকার বাসিন্দা সৌম্যদীপ গুড়িয়া গুজারপুর সুরেন্দ্রনাথ বিদ্যাপীঠের ছাত্র। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭০। ইচ্ছে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করে অধ্যাপক হওয়া। কিন্তু বাবা মুকুলরঞ্জন গুড়িয়া একটি কাপড়ের দোকানের সামান্য বেতনভুক কর্মচারী। সারা মাসে যা আয় হয়, এত দিন ওই টাকায় খাওয়া, পরার বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি ছেলেকে পড়িয়েছেন। কিন্তু এর পর। ছেলের স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে পারবেন তো? এটা ভেবেই কার্যত দিশাহারা মুকুলবাবু ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্নাদেবী। স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘ছেলে বাংলায় ৮৮, ইংরেজিতে ৯৫, রসায়নে ৯৩, পদার্থবিদ্যা ও অঙ্কে ৯৭ পেয়েছে। তার ইচ্ছে বেলুড় বা কলকাতার কোনও কলেজে পড়ার। কিন্তু কী করে হবে তাই ভাবছি।’’
একই অবস্থা শ্যামপুরের গুড়েপোলের বাসিন্দা শ্যামপুর হাইস্কুলের ছাত্র সুপ্রিয় মাজির। সে পেয়েছে ৪৫৯। বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮৮, পদার্থবিদ্যায় ৯৬, রসায়নে ৯৩ ও অঙ্কে ৯২ পেয়েছে। তার ইচ্ছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। বাবা নিমাই মাজি বাগবামারের একটা গেঞ্জি কারখানার কর্মী। তাঁকে কলকাতায় থাকতে হয়। তাঁর নিজের খরচ প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি। বাকি টাকায় সংসার চালানো ও ছেলের পড়াশোনা খরচ বহন করতে হয়। তাঁর এক মেয়েও রয়েছে। সে শ্যামপুর কলেজের ছাত্রী। পেটের টানে তাকেও মাঝে মাঝে কাজ করতে হয় বাবার সঙ্গে। সুপ্রিয়র কথায়, ‘‘স্কুলের সহযোগিতায় এতদূর এসেছি। শিক্ষকেরা বিনাপয়সায় পড়িয়েছেন। প্রধান শিক্ষক আর্থিক ভাবে সাহায্য করেছেন।’’
অন্য দিকে, সিঙ্গুর মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে ৪৮২ নম্বর পেয়েছে হুগলির কামারকুণ্ডুর বাসিন্দা ত্রিদিব প্রতিহার। মেধা তালিকায় নবম স্থানের অধিকারী হয়েও উচ্চ শিক্ষার প্রশ্নে মুষড়ে পড়ছে সে। ত্রিদীবের কথায়, ‘‘আমি গ্রামে থাকি। আমার নিকটাত্মীয়দের অনেকেও গ্রামেই বসবাস করেন। অভিজ্ঞতা থেকে জানি, গ্রামে ডাক্তার পাওয়া খুব কঠিন হয়। ডাক্তার হয়ে আমি গ্রামে চিকিৎসা করতে চাই। গ্রামের মানুষের সেবা করতে চাই। আপাতত জয়েন্ট এন্ট্রান্সের দিকে তাকিয়ে আছি।’’ ত্রিদীবের বাবা রবীন্দ্রনাথ প্রতিহার ওই এলাকারই একটি বেকারিতে কাজ করেন। মা তাপসীদেবী গৃহবধূ। ত্রিদিব বলে, ‘‘বাবার যা রোজগার, তাতে ডাক্তারি পড়ার খরচ কী ভাবে জোগাড় হবে, জানি না।’’ বাবা রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘শুনছি ডাক্তারি পড়ার খরচ প্রচুর। দাঁতে দাঁত চেপে তা জোগাড়ের চেষ্টা করব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে, জানি না। এত দিন শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছেলেকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। এ বার কী হয়, দেখা যাক!’’