তৎপরতা: বেলুড়ে গঙ্গার পাড় সংস্কারের কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র
মাটি সরতে শুরু করেছিল ভিতের নীচ থেকে। ক্রমশ তা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই সেই ভাঙন আটকাতে প্রায় ৭০ বছর পরে বেলুড় মঠের গঙ্গাপাড়ের সংস্কারের কাজ শুরু করেছে কেএমডিএ।
বেলুড় মঠ সূত্রের খবর, কেন্দ্রের নমামি গঙ্গে প্রকল্পে পুরো কাজটির রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছে কেএমডিএ। কয়েক মাস আগে শুরু হওয়া সেই কাজের প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ১১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করার দায়িত্ব আমাদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু ভাঙন রোধের কাজ করার মতো পরিকাঠামো আমাদের নেই। তাই কেএমডিএ কাজটি করছে।’’ বেলুড় মঠ চত্বর গঙ্গার ধারেই হওয়ার কারণে প্রতি মাসে বন্দর কর্তৃপক্ষকে কর দেন মঠ কর্তৃপক্ষ।
স্বামী সুবীরানন্দ জানান, শ্রীরামকৃষ্ণের পার্ষদ তথা ইঞ্জিনিয়ার, স্বামী বিজ্ঞানানন্দ বেলুড় মঠে প্রথম সৌন্দর্যায়নের কাজ করেছিলেন। তার অনেক বছর পরে সঙ্ঘের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বামী নির্বাণানন্দ পুনরায় বেলুড় মঠের সৌন্দর্যায়ন ও গঙ্গার পাড়ের সংস্কারের কাজ করেছিলেন। তার পরে এখন আবার কাজ হচ্ছে। বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ জানান, বছরখানেক আগেই মঠ চত্বরের দু’পাশে গঙ্গার পাড়ের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছিল। সেই সময়ে রাজ্যের তৎকালীন সেচ মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় পরিদর্শন করে ভাঙন রোধের কিছু কাজ করেছিলেন। তার পরেও দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা।
মঠ সূত্রের খবর, বেশ কয়েক মাস আগে বেলুড় জেটি ঘাট থেকে স্বামী বিবেকানন্দের ঘাট পর্যন্ত মঠ চত্বরের গঙ্গার পাড়ে যে কংক্রিটের ভিত রয়েছে, তার নীচে প্রায় দেড়-দু’ফুট করে মাটি সরে গিয়েছিল। বেশ কিছু জায়গায় ঘোঘ তৈরি হওয়ায় সেখান দিয়ে গঙ্গার জল ঢুকেও ভিতের মাটি আলগা করে দিচ্ছিল। স্বামী বিবেকানন্দের ঘরের সোজাসুজি এবং মা সারদার মন্দিরের উল্টো দিকে থাকা দু’টি ঘাটই ভাঙতে শুরু করেছিল।
মঠের এক প্রবীণ সন্ন্যাসী জানান, সমস্যা এতই বেড়ে গিয়েছিল যে অবিলম্বে ভাঙন আটকানোর দরকার হয়ে পড়েছিল। তা না হলে মঠ চত্বরের বেশ খানিকটা অংশ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এর পরেই বেলুড় মঠের তরফে ভাঙন রোধে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী বেলুড় মঠ দর্শনে এসে গঙ্গার পাড়ের ভাঙন সরজমিনে খতিয়ে দেখেন। তখন ভাঙন রোধের কাজের দায়িত্ব নিতে মঠ কর্তৃপক্ষকেই অনুরোধ জানিয়েছিল কেন্দ্র।
কেএমডিএ এবং বেলুড় মঠ সূত্রের খবর, গঙ্গার এই ভাঙন আটকানোর জন্য মাটি সরে যাওয়া অংশে শিট পাইলিং করে সেখানে পাথর দিয়ে জমানো হচ্ছে। উপর থেকে কংক্রিটের স্ল্যাব বসিয়ে একটি ঢাল তৈরি করে ভিত রক্ষা করা হচ্ছে। এত দিন ওই ভিতের উপরে বাঁধানো অংশে বসতে পারতেন দর্শনার্থীরা। কিন্তু এ বার গঙ্গার পাড়টি উঁচু লোহার রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হচ্ছে। কোনও অনুষ্ঠানে ভিড়ের সময়ে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। পাশাপাশি, মঠ চত্বরে বাঁধানো রাস্তা-সহ অন্যান্য সৌন্দার্যায়নের কাজও করছে কেএমডিএ। গঙ্গার দিকে তৈরি হওয়া দেওয়ালে মুরালের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে গঙ্গোত্রী থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত গঙ্গার যাত্রাপথের দৃশ্য। জলপথে যাওয়ার সময়ে সাধারণ মানুষ সেটি দেখতে পাবেন। স্বামী সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘বেলুড় মঠ একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্ত ও দর্শনার্থী এখানে আসেন। তাই সংস্কারের কাজটি খুবই গুরুত্ব ও দক্ষতার সঙ্গে করছে কেএমডিএ।’’