বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ শুনছেন রেল পুলিশের এক আধিকারিক। রবিবার পান্ডুয়ায়। ছবি: সুশান্ত সরকার
রেলকর্মীদের জন্য বিশেষ লোকাল ট্রেনে উঠতে দেওযার দাবিতে রবিবার সকাল থেকে হুগলির চার স্টেশনে অবরোধ করলেন সাধারণ যাত্রীরা। এর মধ্যে পান্ডুয়ায় অবরোধ চলে প্রায় ছ’ঘণ্টা। হুগলিতে দফায় দফায় চার ঘণ্টা। বৈঁচী এবং খন্যান স্টেশনে অবশ্য বেশিক্ষণ অবরোধ হয়নি।
আনলক-পর্বে এখনও লোকাল ট্রেন চালু হয়নি। অথচ, বেশিরভাগ দোকান-বাজার, অফিস-কাছারি পুরোদমেই চালু হয়ে গিয়েছে। কর্মস্থলে পৌঁছনোর জন্য যাঁদের লোকাল ট্রেনই ভরসা, তাঁদের দুর্দশা ঘোচেনি। তাঁদের মধ্যে সামান্য অংশ ভাড়াগাড়িতে বেশি খরচ করে বা নিজস্ব বাহনে যাতায়াত করছেন। বাকিরা কী করবেন?
রেলকর্মীদের জন্য বিশেষ লোকাল চলছে। তাতে ওঠার অনুমতি না-থাকলেও অনেকেই যাতায়াত করছেন। যাঁদের বেশিরভাগই দিনমজুরি বা ছোটখাটো কাজ করেন। কিন্তু রেল পুলিশ বাধা দেওয়া শুরু করেছে এবং শনিবার শ্রীরামপুর স্টেশনে আরপিএফ সাধারণ যাত্রীদের মারধরও করেছে, এই অভিযোগকে ঘিরেই এ দিন তপ্ত হয় পরিস্থিতি। পান্ডুয়া এবং হুগলিতে রেললাইনে কংক্রিটের স্লিপার ফেলা হয়।
প্রতিটি স্টেশনেই পূর্ব রেল এবং রেল পুলিশের আধিকারিকরা গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তোলার চেষ্টা করেন। তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। সরকারি নির্দেশ এলেই ফের সকলের জন্য লোকাল ট্রেন চালুর আশ্বাসও দেন তাঁরা। দুপুর ১২টার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
হাওড়া ডিভিশনের আরপিএফের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ডার মহম্মদ আসলাম এ দিন পান্ডুয়া স্টেশনে এসে বিক্ষোভকারীদের আশ্বাস দেন, ‘‘আরপিএফ কারও গায়ে হাত দেবে না।’’ পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তমতোই বিশেষ ট্রেনে রেলকর্মী ছাড়া সাধারণ যাত্রীদের ওঠার অনুমতি নেই। দীর্ঘদিন ধরে একটা অস্থিরতার পরিবেশে সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’’
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের কাছে লোকাল ট্রেন চালানোর অনুমতি চেয়ে গত মাসেই আবেদন করা হয়েছে। কী ভাবে ট্রেন চালানো হবে তা রাজ্য সরকারের পরামর্শক্রমে স্থির হওয়ার কথা। তবে, সংক্রমণ এবং ভিড়ের আশঙ্কা থেকেই এখনও রাজ্য সরকার এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বা রেলকে কিছু জানায়নি। ফলে, একক ভাবে রেলের পক্ষ থেকে নিজস্ব কর্মীদের যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেন সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন রেলের আধিকারিকদের একাংশ।
এ দিনের ঘটনা নিয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনে উঠতে চেয়ে দু’টি স্টেশনে যাত্রীরা অবরোধ করেছিলেন। রেলপুলিশ এবং আরপিএফের চেষ্টায় অবরোধ ওঠার পরে ট্রেন দু’টিকে হাওড়া নিয়ে আসা হয়।’’
পুজোর আগে নানা প্রয়োজনে বহু মানুষকে বাইরে বেরোতে হচ্ছে। অনেকেই কলকাতায় আসছেন। বাসের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় যাত্রীদের অনেকেই জোর করে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছেন। রেলপুলিশ বা আরপিএফ বাধা দিলে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সেই কারণে যাত্রীদের এ ভাবে বেপরোয়া যাতায়াত ঠেকাতে শিয়ালদহ-সহ বেশ কিছু শাখায় ট্রেনের কামরা ১২ থেকে ৪টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। সব কামরায় রক্ষী দিতে না-পারাও তার অন্যতম কারণ।
এরপরেও অবশ্য গোলমাল এড়ানো যাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে দক্ষিণ শহরতলির সোনারপুর স্টেশনে একই কারণে গোলমাল হয়েছিল। বিশেষ ট্রেনে ওঠা সাধারণ যাত্রীদের নামিয়ে মারধরের অভিযোগ
ওঠে রেল পুলিশের বিরুদ্ধে। রবিবার সকাল ছ’টা নাগাদ পান্ডুয়া স্টেশনে হাওড়াগামী একটি বিশেষ লোকাল থামতেই ট্রেনের সামনে লাইনে বসে পড়েন কয়েকশো যাত্রী। তাঁদের অভিযোগ, বিশেষ ট্রেনে ওঠায় শনিবার শ্রীরামপুর স্টেশনে আরপিএফ সাধারণ যাত্রীদের মারধর করেছে। ওই অবরোধের খবর ছড়াতেই খন্যান, বৈঁচী এবং হুগলি স্টেশনেও অবরোধ শুরু হয়ে যায়। শুরুতে পান্ডুয়ায় অবরোধ
তুলতে ব্যর্থ হয় পুলিশ, রেল পুলিশ এবং আরপিএফ।