কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত চাঁপদানি-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা বিক্রম গুপ্তের নাগাল পেল না পুলিশ।
পুলিশের দাবি সেই একই, বিক্রম ‘পলাতক’। তাঁর খোঁজ চলছে। অবশ্য শুধু বিক্রমই নন, চাঁপদানি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় নতুন করে আর কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। এ দিকে, ঘটনার কাটাছেঁড়া করতে গিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই সামনে উঠে আসছে এবং তার জেরেই ওই হামলা বলে দাবি করছেন প্রশাসনের কেউ কেউ। জেলা তৃণমূলের একটি শিবিরও সে কথা মানছে। যদিও দলের জেলা নেতৃত্ব গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা তার জেরে ফাঁড়িতে হামলার কথা মানতে চাননি।
চাঁপদানি পুরসভার বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুরেশ সাউয়ের সঙ্গে ওই দলেরই ভাইস-চেয়ারম্যান মহম্মদ নাসিমের বিরোধ যে বেশ পুরনো, সে কথা এলাকার দলের নেতাকর্মী সকলেই জানেন। দলেরই একটি সূত্রের দাবি, পুরভোটে নিজেদের অনুগামীদের টিকিট দেওয়া নিয়ে দুই নেতার আকচা-আকচি আরও স্পষ্ট হয়েছিল। দু’পক্ষই বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। রবিবার বিকেলে যাঁর মোটরবাইকের কাগজপত্র না থাকা নিয়ে ওই গোলমালের সূত্রপাত, তিনি ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়া, বিক্ষুব্ধ এবং বর্তমানে সাসপেন্ডেড তৃণমূল নেতা জিতেন্দ্র সিংহের লোক হিসেবে পরিচিত। যে ওয়ার্ডে এ বারও তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন নাসিম। জিতেন্দ্রপ্রসাদ সুরেশের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। আর এক অভিযুক্ত বিক্রম গুপ্তও সুরেশের অনুগামী হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু তৃণমূল নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে ফাঁড়িতে হামলা হবে কেন?
তৃণমূল নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, ওই মোটরবাইক আরোহীকে পুলিশ থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে জিতেন্দ্র এবং তাঁর দলবলের প্রাথমিক ভাবে ধারণা হয়, শাসক দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়ায় পুলিশকে দিয়ে তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। ফাঁড়ির কাছেই জিতেন্দ্রের নির্বাচনী অফিস। নির্বাচনের কারণে সেখানে জিতেন্দ্রর প্রচুর অনুগামী সেই সময় জড়ো হয়েছিল। তাদের লোককে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানতে পেরেই তাঁরা থানায় যান। পরে তাঁদের সঙ্গে বিক্রম দলবল নিয়ে যোগ দেন। তার জেরেই পুরো বিষয়টি বড় আকার নেয়। দলে এবং আগামী পুরবোর্ডে নিজের গুরুত্বও বাড়িয়ে নিতে চেয়েছিলেন ওই নেতাকর্মীরা। সেই অঙ্কেই রবিবারের ঘটনাটি ঘটে। একই দাবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের কয়েক জন কর্তারও।
জিতেন্দ্রর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। পুলিশের খাতায় জিতেন্দ্রও ‘পলাতক’। তবে, চাঁপদানির এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘এখানকার একটা বাচ্চা ছেলেও জানে জিতেন্দ্রকে এখানে কে বা কারা ভোটে দাঁড় করিয়েছে। এই সব করতে গিয়ে শুধু শুধু আমাদের দলকে হেনস্থা হতে হল। এলাকায় বড় ঘটনা ঘটে গেল। ভোটের মুখে মানুষের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।’’
দলের কিছু নেতা গোলমালের পিছনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিলেও তা মানতে চাননি সুরেশ সাউ। তাঁর দাবি, ‘‘ভোটের মুখে আমাদের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে কেউ কেউ ফায়দা তুলতে চাইছে। কিন্তু সে পথে আমরা পা দেব না। ফাঁড়িতে হামলা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। যা বলার আমাদের জেলা নেতৃত্ব বলে দিয়েছেন।’’ কোনও মন্তব্য করতে চাননি নাসিমও।
জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘মানুষ বাম আমল দেখেছে। শাসক দলের কেউ সে সময় গ্রেফতার হতেন না। আমি আবারও বলছি, ওই ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, তাদের সবাইকে পুলিশ গ্রেফতার করবে। আমাদের কোনও গোষ্ঠীবিবাদ নেই। পুরোটাই বিরোধী দলগুলির গল্প।’’
রবিবারের হামলার পরে দু’দফায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে আর কেউ ধরা পড়েনি। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার দাবি, তল্লাশি চলছে। যারা ওইদিন গণ্ডগোল পাকিয়েছিল, তারা বেশিরভাগই পলাতক।’’ পুলিশের ‘ভূমিকা’ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি স্বপন পাল বলেন,‘‘সংবাদমাধ্যমের চাপ ছিল। তাই হাতের সামনে পুলিশ যাকে পেয়েছে রবিবার ধরেছে। বাকিরা পালিয়ে গিয়েছে। ভোটের দিন তারা ফিরে এসে এলাকা শাসন করবে।’’