একতারা: উৎসবের জন্য সেজে উঠছে প্রাঙ্গণ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
জাতপাতের ভেদাভেদ কাটাতে তাঁদের ‘লড়াই’!
আরামবাগের বিভিন্ন বয়সের এবং পেশার জনাচল্লিশ মানুষ একজোট হয়ে সেই লড়াইয়ের প্রস্তুতি (মহলা) শুরু করে দিয়েছেন হাটে- বাজারে। তাঁদের হাতে একতারা, খোল ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। আর মুখে লালন ফকিরের গান— ‘এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে, যে দিন হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান জাতি গোত্র নাহি রবে’।
আরামবাগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বসন্তপুর আমতলা মাঠে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনের বাউল উৎসব। এ জন্য তৈরি হচ্ছে ‘মানবতা মঞ্চ’। উৎসবের পোশাকি নাম ‘আন্তর্জাতিক গোঁসাই পরব’। এই পরবকে ঘিরেই আগাম উন্মাদনা শুরু হয়েছে শহরে। রবিবার উদ্যোক্তাদের তরফে মহলা হয়ে গেল স্থানীয় মায়াপুর হাটে। দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হল ‘মানবতা মঞ্চে’।
উদ্যোক্তাদের পক্ষে ওই কমিটির সভাপতি তথা চিকিৎসক অশোক নন্দী বলেন, “এই উৎসব আসলে জাতপাত বা ধর্মের বিভাজন মোছার লড়াই। এই লড়াই চলতেই থাকবে।” একই কথা জানিয়ে কমিটির সম্পাদক, ব্যবসায়ী শান্তনু রায় বলেন, “আমাদের এই উৎসাহ আর পরিশ্রম বিফলে যাবে না বলেই বিশ্বাস। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে বন্ধন তৈরি করতে, তাঁদের গান, জীবন, ভাবনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত ভাবেই সুফল মিলবে।”
উদ্যোক্তারা জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা এবং বাংলাদেশ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন বাউল-শিল্পী আসবেন উৎসবে। আসছেন জাপানি শিল্পী মাকি কাজুমি, কানকো সিমুজি এবং কাজুমি ফোকোজোয়া। উৎসব প্রাঙ্গণে মূল মঞ্চ ছাড়াও হোগলার ছাউনি দেওয়া ১৬টি আখড়া নির্মাণ হচ্ছে। ওইসব আখড়ায় বাউল শিল্পীদের সঙ্গে জমজমাট গানের আসর বা ভাব বিনিময় করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। কেউ চাইলে বাউলদের সঙ্গে গানের সুযোগও পাবেন। শান্তিনিকেতনের খোয়াইয়ের অনুকরণে থাকছে হস্তশিল্পের সম্ভার। পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশ, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, টেরাকোটা ইত্যাদি বাংলার ঐতিহ্যেরও দেখা মিলবে উৎসবে। তিন দিন ধরে মোট ৭০০ দুঃস্থ মানুষকে বিনামূল্যে পোশাক বিতরণ করা হবে।