WB assembly election 2021

রাস্তা হয়েছে বলাগড়ে, হয়নি পেঁয়াজের বাজার

বলাগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভাঙন অব্যাহত। পেঁয়াজের সংরক্ষণ বা সুষ্ঠু বাজার গড়ে ওঠেনি বলে ক্ষোভ চাষিদের।

Advertisement

প্রকাশ পাল

বলাগড় শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:০৬
Share:

পেঁয়াজ সংরক্ষণকেন্দ্র না থাকায় বাড়িতেই রাখেন চাষি। ছবি: সুশান্ত সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প সবুজদ্বীপ সেজে উঠছে। কাঁচা রাস্তা পাকা হয়েছে। জায়গায় জায়গায় উঁচু স্তম্ভে জোরাল আলো। লঝঝড়ে ভুটভুটি নয়, গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে সুদৃশ্য লঞ্চ চলছে।

Advertisement

এ সব চাকচিক্য দেখে যদি কেউ ভাবেন বলাগড়ের মানুষের মনে কোনও ক্ষোভ নেই, তা হলে তাঁকে ধাক্কা খেতে হতে পারে। কারণ, না পাওয়ার তালিকাও কম দীর্ঘ নয়! বিশেষত রুজিরুটির প্রশ্নে ক্ষোভ সর্বত্র। নিক্তিতে উন্নয়ন নাকি অনুন্নয়ন, কে বেশি ভারি— তা নিয়ে শাসক-বিরোধী চর্চা তুঙ্গে।

বলাগড় হুগলি জেলার প্রত্যন্ত ব্লক। পাশে পূর্ব বর্ধমান। গঙ্গার ওপারে নদিয়া। বলাগড়ের মূল জীবিকা চাষবাস। এখানকার সুখসাগর পেঁয়াজের নামডাক রয়েছে। অথচ, পেঁয়াজের সংরক্ষণ বা সুষ্ঠু বাজার গড়ে ওঠেনি বলে ক্ষোভ চাষিদের। ফলে, ফড়ে-নির্ভর ব্যবস্থাই চলছে। তাঁদের খেদ, নাসিকের পেঁয়াজের উপরে মুখিয়ে থাকে বাংলা। অথচ, বলাগড় উপেক্ষিত। পেঁয়াজ চাষি বাবলু ঘোষ বলছেন, ‘‘যখন যা দাম পাই, তাতেই বেচতে হয়। পরিকাঠামো আগে যা ছিল এখনও তাই। সুষ্ঠু ব্যবস্থা হল কই!’’

Advertisement

গুপ্তিপাড়া ভেবেছিল, পর্যটন কেন্দ্র হলে কর্মসংস্থান হবে। তাও বিশ বাঁও জলে। সিপিএমের বলাগড় এরিয়া কমিটির সদস্য তথা গুপ্তিপাড়া-২ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান জয়দেব দাস বলেন, ‘‘কর্মসংস্থানের দিশা নেই। বেকার ছেলেমেয়েদের কপালে কিছুই জুটল না। উল্টে লকডাউনে অনেকে কর্মহীন হয়েছেন। কৃষকের অবস্থা শোচনীয়। কিছু রাস্তা করে আর আলো লাগিয়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি দেওয়া হচ্ছে।’’ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কর্মতীর্থ এমন জায়গায় হয়েছে, কারও কাজে আসেনি। একই কারণে কৃষক বাজারে চাষি যাওয়ার উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। অথচ এর পরিকাঠামো তৈরিতে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, মানুষের রুজি-রুটির সংস্থান না থাকলেও বালি আর মাটি মাফিয়াদের পোয়াবারো এ তল্লাটে। অনেক জায়গায় কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে গভীর করে। অভিযোগ, মাটি বিক্রির টাকা শাসকদলের নেতাদের একাংশের ঘরে পৌঁছেছে। একই অভিযোগ উঠেছে গঙ্গা থেকে বালি তোলার ক্ষেত্রেও। বিজেপি নেতা তরুণকুমার দাসের অভিযোগ, ‘‘উন্নয়ন হয়েছে খাতায়-কলমে। পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে শুধু দুর্নীতি হয়েছে। মাটি মাফিয়াদের দাপট বেড়েছে।’’

বলাগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভাঙন অব্যাহত। জিরাটের খয়রামারিতে একটি স্কুল সলিল-সমাধির জন্য দিন গুণছে। এই ব্লকে আর্সেনিকের সমস্যা রয়েছে। অথচ প্রতিশ্রুতি সত্বেও আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের প্রকল্প গড়ে ওঠেনি। গুপ্তিপাড়া ষষ্ঠীতলার বাসিন্দা জয়ন্ত চক্রবর্তী জানান, আর্সেনিক রয়েছে জানিয়ে তাঁর বাড়ির সামনের টিউবওয়েল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ন’মাস আগে লাল দাগ দিয়ে বিপদ সঙ্কেত দিয়ে দেওয়া হয়। পরিবর্তে আর্সেনিকমুক্ত জল সরবরাহের ব্যবস্থা এখনও হয়নি। কিছুটা দূর থেকে তাঁদের জল আনতে হয়। তবে, পাশের ইটের রাস্তা ঢালাই হয়েছে।

ষাট ছুঁইছুঁই মানুষটি বলেন, ‘‘আমি স্নাতক। বাম আমলে চাকরি পাইনি। এই আমলেও কিছু পেলাম না। পুজোআর্চা করে কোনওরকমে সংসার চলে।’’ মানুষের বিস্তর ক্ষোভ গুপ্তিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়েও। বছর কয়েক আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নবরূপে চালু করেছিল নবান্ন। কিন্তু গ্রামবাসীর অভিযোগ, চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে সেই তিমিরেই। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘চিকিৎসক এক জন আছেন। কিন্তু পরিকাঠামো কিছুই নেই। একটু বেশি কিছু হলেই অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’

শাসক দল অবশ্য সব অভিযোগ মানছে না। জিরাটের তৃণমূল নেতা তপন দাসের বক্তব্য, ‘‘উন্নয়ন যাঁরা চোখে দেখতে পান না, তাঁরা তো বলবেনই। এখন কিন্তু বর্ষায় বলাগড়ের মানুষকে কাদায় পা ফেলতে হয় না। অন্ধকার রাস্তায় হোঁচট খেতে হয় না। জিরাট হাসপাতালের চিকিৎসা উন্নত হয়েছে। মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়েছে।’’

বিধায়ক অসীম মাঝি মানছেন, কর্মতীর্থে মানুষের উপকার বিশেষ হয়নি। উপযুক্ত জায়গা না মেলায় এই সমস্যা। তাঁর দাবি, গঙ্গাভাঙন রোধে পোর্ট ট্রাস্ট এবং রাজ্য সরকার মিলে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। আর্সেনিকমুক্ত জল প্রকল্পের কাজও শুরুর পথে। ৫২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই কাজ হবে। তিনি বলেন, ‘‘প্রকল্পদু’টি হলে বহু মানুষের উপকার হবে। সবুজ দ্বীপের কাজ মাঝপথে।’’

শাসক দল উন্নয়নের যে ফিরিস্তিই দিক, গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে স্বস্তিতে নেই তারা। ওই নির্বাচনে বিজেপির তুলনায় ৩৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পিছিয়ে তৃণমূল। তবে দলের নেতারা বলছেন, মানুষের দুয়ারে রাজ্যের উন্নয়নের কথা বলে ভোট বৈতরণী পেরিয়ে যাবে।

সেই অঙ্ক কতটা মিলবে, প্রশ্ন সেটাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement