সাহায্যের আবেদন নিয়ে পাঁচলা ব্লক অফিসে জরিশিল্পীরা। —নিজস্ব িচত্র
কাজ নেই। সহায়তা চাই। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে জরিশিল্পী আবেদন করছেন পাঁচলা ব্লক অফিসে।
ওই ব্লক অফিসে আবেদনপত্র জমা নেওয়ার একটি ‘ড্রপ বক্স’ থাকে। জরিশিল্পীদের আবেদনের হিড়িক দেখে চারটি ‘ড্রপ বক্স’ রাখা হয়েছে। সেগুলিও ভর্তি হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। গত এক সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার আবেদনপত্র জমা পড়েছে দেখে চক্ষু চড়কগাছ ব্লক প্রশাসন কর্তাদের।
পাঁচলার ৯০ শতাংশ মানুষ জরির কাজ করেন। লক্ষাধিক মানুষ এই কাজে যুক্ত। তাঁদের আবেদনের বহর দেখে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা মনে করছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ‘সহায়তা প্রকল্প’ ঘোষণা করা হয়েছে, হয়তো এমন কোনও গুজবের শিকার হয়ে জরিশিল্পীরা দলে দলে আবেদনপত্র জমা দিচ্ছেন।
বিডিও এষা ঘোষ বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে আবেদন করেছি, তারা যেন জরিশিল্পীদের বোঝান যে সরকার বিশেষ কোনও প্রকল্প ঘোষণা করেনি। এই ধরনের গুজবের ফাঁদে তাঁরা যেন না পড়েন।’’
জরিশিল্পীরা অবশ্য জানিয়েছেন, কোনও গুজব তাঁদের কানে যায়নি। করোনা আবহে লকডাউনের শুরু থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে তাঁরা নিরুপায় হয়ে সহায়তার আবেদন করছেন। তাঁরা কলকাতার মহাজনদের কাছ থেকে বরাত এনে কাজ করতেন। বিনিময়ে পারিশ্রমিক পেতেন। কিন্তু পাঁচ মাস ধরে কোনও মহাজন ব্যবসা করছেন না।
এই এলাকার বহু জরিশিল্পী মুম্বই-দিল্লিতেও কাজ করেন। লকডাউনের সময় তাঁরা ফিরেছিলেন। কাজের খোঁজে অনেকে ফের চলে গিয়েছেন। যাঁরা রয়ে গিয়েছেন তাঁরাই পড়েছেন সমস্যায়। জরিশিল্পীদের বক্তব্য, এখানে চাষের কাজ হয় না। অন্য কাজও মিলছে না। রোজগার শূন্যে ঠেকেছে।
আবেদনকারীদের মধ্যে চড়া পাঁচলার শেখ আনারুল বলেন, ‘‘সরকার যে কোনও প্রকল্প ঘোষণা করেনি, সেটা জানি। আমি এবং দুই ছেলে কাজ করতাম। কারও কাজ নেই। রেশন পেয়েছি। কিন্তু নগদ টাকাও তো দরকার। নিরুপায় হয়ে বিডিও-র কাছে আবেদন করেছি।’’ একই বক্তব্য, আর এক আবেদনকারী গাববেড়িয়ার শেখ বাহাউদ্দিনের।
‘সারা ভারত জরিশিল্পী কল্যাণ সমিতি’র সম্পাদক মুজিবর রহমান মল্লিক বলেন, ‘‘জরিশিল্পীরা নিজেরাই নিরুপায় হয়ে সহায়তা চাইছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো যায় কিনা তা সরকার ভেবে দেখুক।’’
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে জনা দুই জরিশিল্পী সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে ‘বিশেষ ত্রাণ’ হিসাবে কিলো পাঁচেক গম দেয় ব্লক প্রশাসন। তারপর থেকে বিদ্যুৎ গতিতে আবেদন জমা পড়তে থাকে।
ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘অসহায় অবস্থার শিকার হয়ে জরিশিল্পীরা সহায়তা চাইছেন। অনেকে আমাদের কাছ থেকেও আবেদন লিখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
কেউ যদি নিজে থেকে সহায়তা চান, আমরা বারণ করতে পারি না। প্রমাণ হচ্ছে, কাজ হারানো মানুষেরা আজ কতটা বিপদে আছেন। সরকারের সমস্যা সমাধানে জোর দেওয়া উচিত।’’
পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শেখ জলিলের দাবি, ‘‘১০০ দিনের প্রকল্পে প্রচুর জরিশিল্পীকে কাজ দেওয়া হয়েছে। সবাইকে রেশন দেওয়া হচ্ছে। সরকার সাধ্যমতো তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।’’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যে কেউ ব্লক অফিসে সহায়তা চেয়ে আবেদন করতে পারেন। কাউকে কাউকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষ ত্রাণ দেওয়াও হয়। কিন্তু সেটাই গণ হারে আবেদন জমা পড়ার কারণ বলে মনে হয় না। গুজবের জেরেই এটা হচ্ছে।’’