বিপজ্জনক: মাথার উপর ঝুলছে বিদ্যুতের তার। যাতায়াতের পথও সঙ্কীর্ণ। ছবি: মোহন দাস।
এখানে স্টোভ-হিটার জ্বালিয়ে রান্না হয়। এখানে যত্রতত্র ঝুলছে জটপাকানো বিদ্যুতের তার। এখানে কোথাও কোনও অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র নেই।
জলের ব্যবস্থা নামমাত্র। শৌচাগার এবং পানীয় জলের সরু পাইপের ট্যাপকলই ভরসা। কিন্তু বালতি নেই।
অগ্নি-সুরক্ষা বিধির তোয়াক্কা না-করে এ ভাবেই দিনের পর দিন চলছে আরামবাগের ‘পুরসভা সুপার মার্কেট’। যা নিয়ে খোদ দমকল দফতরই উদ্বিগ্ন। এমনকি, বাজার কমিটির সম্পাদক চিন্ময় ঘোষও মানছেন, ‘‘আগুন লাগলে নিমেষে ধ্বংস হয়ে যাবে বাজার এবং সংলগ্ন পাড়া।’’
শহরের ব্যস্ততম হাসপাতাল রোডের গায়ে দোতলা বাজারটির একতলায় ৪০টি দোকানঘর রয়েছে। দোতলার একদিকে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ডিভিশনাল অফিস, অন্যদিকে চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র। সম্প্রতি তিন তলায় ফ্ল্যাট নির্মাণ শুরু করেছে পুরসভা। নীচের তলার ব্যবসায়ীদের একজনও দমকলের বৈধ শংসাপত্র দেখাতে পারেননি। সিঁড়ির নীচের মিটার-ঘরটি আবার ব্যবসায়ীর গুদামঘর হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে।
শহরের পুরসভা এবং ব্যক্তি মালিকানাঝীন মার্কেট কমপ্লেক্সগুলির কোথাও যে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, সে কথা জানিয়ে দমকল দফতর এ বছর জানুয়ারির গোড়ায় মহকমা প্রশাসন এবং পুর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ।
দমকল দফতরের আরামবাগ বিভাগের ওসি শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জতুগৃহ হয়ে আছে আরামবাগের শহরের মার্কেট কমপ্লেক্সগুলি। অগ্নি নিরাপত্তা বিধি মানা নিয়ে ওই সব কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার নোটিস পাঠানোও হয়েছে। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। যাবতীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছি।” দমকল দফতরের হুগলি ডিভিশনাল অফিসার সনৎকুমার পাল বলেন, “অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ধারাবাহিক সচেতনতা শিবিরও আয়োজন করা হচ্ছে।”
পুরসভা সুপার মার্কেটে কেন মানা হয় না অগ্নি সুরক্ষা বিধি?
এ প্রশ্নে সামনে আসছে চাপান-উতোর। দমকলের দাবি, প্রতি বছরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এবং দমকল দফতরের বৈধ শংসাপত্র নেওয়া আছে কিনা খতিয়ে দেখার জন্য অভিযান চালানো হয়। তখনই অগ্নি সুরক্ষা নিয়ে কী করণীয় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বোঝানোও হয়। যেমন, একাধিক তলবিশিষ্ট ভবনের প্রতি তলায় জলের লাইন রাখা, বাড়ির আয়তন এবং তল অনুযায়ী আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র রাখা, বিদ্যুতের মিটার-ঘর এবং লাইন সংস্কার করা ইত্যাদি। কিন্তু অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। এ জন্য কিছু ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করারও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।
পরিস্থিতির জন্য আবার দমকল দফতর এবং পুরসভার বিরুদ্ধেই উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছে বাজার কমিটি। কমিটির সম্পাদক চিন্ময়বাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘দমকল দফতর থেকে কেউ আসেননি। কী করতে হবে জানানোও হয়নি। পুরসভা থেকেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা আতঙ্কে আছি।’’ জটপাকানো তার নিয়ে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার আরামবাগের ডিভিশন্যাল ম্যানেজার শুভেন্দু ভড় বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে পুরো বিষয়টা দেখা শুরু করেছি।”
মহকুমা প্রশাসন অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, শহরের বাজার, নার্সিংহোম, লজ ইত্যাদি জায়গায় অগ্নি সুরক্ষা বিধি সংক্রান্ত পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হবে। শীঘ্রই সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হবে। পুরপ্রধান স্বপন নন্দী বলেন, “দমকলের নির্দিষ্ট ছাড়পত্র নিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে বলা হয়েছে। আমরা নিজেরাও আগুন-বিধি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছি।”