সোমনগরে শ্মশানকালীর ভোগে কাতলা দেওয়া রীতি

কালীপুজোর রাতে জমজমাট হয়ে ওঠে হুগলির প্রত্যন্ত ব্লক জাঙ্গিপাড়ার রাধানগর পঞ্চায়েতের সোমনগর গ্রাম।

Advertisement

প্রকাশ পাল

জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৩
Share:

বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের কালী প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র

কালীপুজোর রাতে জমজমাট হয়ে ওঠে হুগলির প্রত্যন্ত ব্লক জাঙ্গিপাড়ার রাধানগর পঞ্চায়েতের সোমনগর গ্রাম।

Advertisement

লোকগাথা এবং বিশ্বাসের জেরে গ্রামবাংলার বহু দেবদেবীকে ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি। সোমনগরের প্রাচীন শ্মশানকালী পুজোও তাই। আশপাশের এলাকার মানুষের কাছে দেবী ‘জাগ্রত’। যাঁর কাছে মনের কথা বলতে আসেন গ্রামবাসীরা। বহু ভক্ত মানত করেন।

বর্তমানে বারোয়ারি হলেও এ পুজো ছিল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। পরিবারের লোকজন জানান, পুজোর প্রচলন হয় সাত শতক আগে। সেই সময় বৈশাখের এক দুপুরে পরিবারের পূর্বপুরুষ বলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় (তখন জাঙ্গিপাড়ারই বোড়হল গ্রামের বাসিন্দা) সোমনগর গ্রামের শ্মশানে বেলগাছের তলায় বসেছিলেন। সেই সময় দিগন্ত-জ্যোতি ছড়িয়ে লালপেড়ে শাড়ি পরা এক নারী তাঁর সামনে হাজির হন। চমকে যান বলদেববাবু। সেই নারী নিজেকে শ্মশানকালী বলে সেখানে কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে বংশ পরম্পরায় পুজো করার নির্দেশ দিয়ে অন্তর্হিত হন। এর পরেই বলদেববাবু পুজোর প্রচলন করেন। সেই থেকেই মহা সমারোহে পুজো চলে আসছে।

Advertisement

পরিবারের বর্তমান সদস্য শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাত-আট দশক ধরে বারোয়ারি নামে পুজো হচ্ছে। পরিবারের ৩২ ঘর মিলে পুজোর আয়োজন করা হয়। আগে মাটির মন্দিরে পুজো হত। এখন মন্দির পাকা হয়েছে।’’ শান্তনুবাবুদের আত্মীয় শ্যামল মিত্রের কথায়, ‘‘এই পুজোকে কেন্দ্র করে প্রত্যন্ত জনপদটি যেন মুখরিত হয়ে ওঠে। পরিবারের অনেকেই কর্মসূত্রে অন্যত্র থাকেন। কালীপুজোর সময় তাঁরা সকলে ফেরেন।’’

দেবীর রং কালো। মাথায় চুল নেই। কালীপুজোর দিনই প্রতিমা রং করা হয়। পঞ্চমুণ্ডির আসনে দেবী অধিষ্ঠিতা। আকাশে সন্ধ্যাতারা উঠলে মাটির প্রদীপ জ্বেলে দেবীর ‘চক্ষুদান’ করা হয়। সাজানো হয় অলঙ্কারে। ‘চক্ষুদান’ ও ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’র পরে ষোড়শ উপচারে পুজো। বন্দ্যোপাধ্যায় বংশের প্রবীণ সদস্য বীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পরিবারের পুরোহিত নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায় পুজো করেন।

পুজোর প্রচলন যাঁর হাত ধরে, সেই বলদেববাবুর ‌নামে পুজোর সংকল্প হয়। বিশেষ ভোগ হিসেবে দেবীকে দেওয়া হয় পাখনা কাটা, আঁশ ছাড়ানো কাতলা মাছ। মাছটি পুজোর দিন বিকেলেই স্থানীয় পুকুর থেকে ধরা হয়। এ ছাড়াও খিচুড়ি, ভাজাভুজি, চচ্চড়ি, শুক্তো, বাঁধাকপির তরকারি, লুচি প্রভৃতি ভোগ হিসেবে মাকে নিবেদন করা হয়। পুজোতে বলি না হওয়া পর্যন্ত গ্রামের অন্য পুজোয় বলি হয় না। ভক্তদের বিশ্বাস, মায়ের কাছে যে যা মানত করেন, পূর্ণ হয়। দূরদূরান্ত থেকেও দলে দলে ভক্ত আসেন। গ্রামেরই পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement