তামিলনাড়ু নয়, ফরাসি বহুজাতিক সংস্থা পুজোর সঙ্গে অ্যাম্বাসাডরের নতুন দৌড় শুরু হোক হুগলির উত্তরপাড়া ইউনিট থেকেই— এমনটাই দাবি তুলল এখানকার হিন্দুস্তান মোটরসের শ্রমিক মহল্লা।
স্বাধীনতার পর থেকে উত্তরপাড়া কারখানায় অ্যাম্বাসাডর তৈরি করত সি কে বিড়লা গোষ্ঠীর সংস্থা হিন্দুস্তান মোটরস। সেই কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে তিন বছর হয়ে গেল। এতদিন কারখানা খোলার কোনও আশার আলো দেখা যাচ্ছিল না। এ বার সংস্থাটি বিএসই-কে জানিয়েছে, অ্যাম্বাসাডর ব্র্যান্ড ও ট্রেডমার্ক ৮০ কোটি টাকায় পুজো গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করার কথা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় জল্পনা। কিঞ্চিৎ আশার আলো দেখে শ্রমিক মহল্লা। এ বার কি তবে ‘পুজো’, ‘সিট্রন’-এর মতো নামী ব্র্যান্ডের গাড়ি নির্মাতার হাত ধরে নতুন অবতারে ফিরবে অ্যাম্বাসাডর? আরও এক ধাপ এগিয়ে কেউ কেউ বলছেন, উত্তরপাড়ার অদূরেই চন্দননগর ছিল ফরাসি উপনিবেশ। তাঁদের আশা, ফের এক ফরাসি সংস্থার হাত ধরেই হয়তো নতুন করে দৌড় শুরু হবে ব্র্যান্ড-অ্যাম্বাসাডরের।
কারখানা বন্ধের সময় উত্তরপাড়া ইউনিটে প্রায় ১৪০০ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। এখনও অন্তত ৬০০ শ্রমিক সেখানে রয়েছেন। বকেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। নতুন খবর শুনে তাঁরা চান, এখান থেকেই শুরু হোক নতুন দৌড়। তাঁদের দাবি, অ্যাম্বাসাডর ব্র্যান্ডের যে সুনাম তা কিন্তু এখানকার ইউনিটের শ্রমিকদের ঘাম-রক্তে গড়া। সোমনাথ মজুমদার ওই কারখানার ‘প্রেস শপে’ কাজ করতেন। কারখানা যখন ঝাঁপ বন্ধ হয়, তখনও তাঁর আট বছর চাকরি ছিল। এখন বকেয়ার জন্য আদালতে মামলা লড়ছেন সোমনাথ। তিনি বলেন, “যদি কিছু হয়, এই ইউনিট থেকেই হোক। রাজ্য সরকারের সেই লক্ষ্যেই ঝাঁপানো জরুরি। হিন্দমোটরের শ্রমিকেরা এখনও কাজের জন্য তৈরি আছেন।’’ কারখানায় এক সময় শ্রমিকদের হয়ে ‘বার্গেনিং এজেন্ট’ ছিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (এসএসকেইউ)। সংগঠনের সম্পাদক আভাষ মুন্সি বলেন, “এখানকার শ্রমিকদের পরিশ্রমেই অ্যাম্বাসাডার ব্র্যান্ডের রমরমা ছিল। যদি কিছু সত্যিই হয়, এখান থেকেই হোক।”
এক সময় হুগলির সাহাগঞ্জে ডানলপ কারখানার টায়ার এবং হিন্দমোটরের অ্যাম্বাসাডার— এই দুই ব্র্যান্ডের কাঁধে চড়ে শিল্পমহলে কদর বাড়িয়েছিল রাজ্য। শ’য়ে শ’য়ে মানুষের রুটি-রুজির ঠিকানাও ছিল এই দুই কারখানা। ডানলপ কার্যত বন্ধ। হিন্দমোটর থেকে যে আওয়াজ উঠেছে, তা কতদূর পৌঁছয়, এখন সেটাই দেখার।